গুসকরায় ঘটনাস্থলে পড়শিরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
দাদাকে তাড়া করে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। গুসকরার ধারাপাড়ায় শুক্রবার রাতে শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে তিনি প্রাণে বেঁচেছেন বলে দাবি নিহতের স্ত্রীর। তাঁর অভিযোগ, ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে তাঁকে তাড়া করেছিলেন দেওররা। বাধা দিতে গিয়ে খুন হলেন স্বামী। পুলিশের অবশ্য প্রাথমিক অনুমান, ঘটনার পিছনে সম্পত্তিগত বিবাদ রয়েছে।
শনিবার ভোরে ধারাপাড়ার কলডাঙা থেকে শিবু মুর্মু (৪২) নামে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠায় গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ। তাঁর স্ত্রী শেফালি মুর্মু অভিযোগ করেন, দেওর সুফল মুর্মু ও হোবনা মুর্মু খুন করেছে স্বামীকে। জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানান, সুফলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী কারণে এই ঘটনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” হোবনা মুর্মুকেও আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
১০ ও ৫ বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার দম্পতির। একই চত্বরে বাড়ি শিবুবাবুর দুই ভাইয়েরও। শনিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে নিহতের স্ত্রী শেফালিদেবীর অভিযোগ, “আমাকে ডাইন অপবাদ দিয়ে এলাকাছাড়া করতে চেয়েছিল দেওররা। শুক্রবার গভীর রাতে ওরা আমাদের উপরে চড়াও হয়। বাড়ি থেকে আমরা সবাই পালিয়ে যাই। ছেলেকে নিয়ে কোনওমতে এলাকা ছাড়তে হয়। আমাদের আগলাতে গিয়ে গাছতলায় পড়ে গেলে দেওররা পিটিয়ে মারে আমার স্বামীকে।” পুলিশ জানায়, লাঠি-রডের সঙ্গে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবারে গণ্ডগোল ছিল। নিহতের পরিবারকে উৎখাত করতে না পেরে ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে এলাকাছাড়া করতে চাওয়া হয়েছে।
শেফালিদেবীর আরও অভিযোগ, “আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় গাছতলায় পড়ে ছটফট করলেও পাড়ার কেউ এগিয়ে আসেননি। মৃতদেহ বর্ধমানে আনার পরেও সঙ্গে কাউকে পাইনি।” খবর পেয়ে নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ধারাপাড়ার বাড়িতে আসেন। দুই নাতিকে আগলে শিবুবাবুর শাশুড়ি সুমিত্রা মাড্ডির খেদ, “কেউ মারা গেলে পাড়ার লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এখানে সবাই আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন!”
পড়শিদের একাংশের দাবি, নিহত ব্যক্তি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। এরই মধ্যে ওই পরিবারের এক আত্মীয় অসুস্থ হন। তখন তাঁরা এক ওঝার কাছে গেলে সে জানায়, বাড়িতে ‘ডাইন’ রয়েছে। দিন দশেক আগে বাড়িতেই সালিশি হয়। সেখানে শেফালিদেবীকে ‘ডাইন’ অপবাদ দেওয়া হয়। নিহতের শ্বশুর লাল মুর্মুর অভিযোগ, ‘‘তিন দিন আগে ওঝা-গুণিন এনে শেফালিকে ঝাড়ফুঁক করা হয়। শুক্রবার রাতে দেওররা দাবি করে, ওই ঝাড়ফুঁক ঠিকমতো হয়নি। আবার করতে হবে। শেফালি তাতে রাজি হয়নি বলে হামলা করা হয়।” বাড়ি তালাবন্ধ থাকায় অভিযুক্তদের পরিবারের কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
‘ডাইন’ অপবাদ দেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে এই জেলায়। বর্ধমান শহর লাগোয়া হাটশিমুল, জামালপুর, মেমারি-সহ নানা জায়গায় বারবার এ রকম অপবাদ দেওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “নিয়মিত সচেতনতা শিবির করে কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এক দিনে সবাই সচেতন হবেন, সেটাও আশা করা যায় না।” গুসকরার কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার পাশের ওয়ার্ডেই এমন ঘটনা! কুসংস্কার বন্ধে আমরা সচেতনতা শিবির করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy