সকালে তখনও চলছে কাজ। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যানবাহন। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর ব্যারাজে। ছবি: বিকাশ মশান
প্রথম তিন দিন কেটেছিল নির্বিঘ্নে। তাল কাটল চতুর্থ দিনে। দুর্গাপুর ব্যারাজে রাস্তার সংস্কারের জেরে ভোর থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা যানজটে নাকাল হলেন যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল হল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পরে ধীরে-ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সোমবার থেকে ব্যারাজে কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তার এক পাশ বন্ধ রেখে অন্য পাশে কাজ হচ্ছে। খোলা অংশ দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করছে বাস ও অন্য ছোট যানবাহন। ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কড়া ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জেরে বুধবার পর্যন্ত বেশি ভোগান্তি হয়নি বলে জানিয়েছিলেন যাত্রীরা। তবে বৃহস্পতিবার চরম সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে ব্যারাজের এক পাশের রাস্তায় পিচ দিয়ে তাপ্পি দেওয়া হয়েছিল। এখন সে দিক দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। অন্য পাশে যন্ত্র দিয়ে কংক্রিটের ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। রাতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সেই সময়ে কাজ করা হচ্ছে। চালু লেনে যন্ত্রপাতি ও গাড়ি রেখে কাজ চলছে। কিন্তু এ দিন সকাল হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। ফলে, যন্ত্র ও গাড়ি সরানো যায়নি। সে কারণে ব্যারাজে যানবাহন উঠতে দেওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোর থেকে ব্যারাজের দু’দিকে মোটরবাইক, সাইকেল, ছোট ভ্যান, গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। দুর্গাপুরের বিভিন্ন কারখানা, বাজারে কাজে যাওয়ার পথে আটকে পড়েন বহু মানুষ। বাঁকুড়ার নানা এলাকা থেকে দুর্গাপুর স্টেশনে যাওয়া যাত্রীরা, ভ্যানে আনাজ নিয়ে যাওয়া মানুষজন আটকে পড়েন। পরে গাড়ি ও যাত্রী বোঝাই বাস যোগ হতে থাকায় যানজট বাড়ে। স্কুলে যাওয়া গাড়িও আটকে যায়। ব্যারাজের দু’দিকে প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজট তৈরি হয়। সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান অনেকে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও দুর্গাপুরের কোকআভেন থানার পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে নাজেহাল হয়।
নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতি সরিয়ে যান চলাচল শুরু হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ঘণ্টা ছয়েক পরে। সেচ দফতরের এসডিও (ব্যারাজ) গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাতেই কাজ হচ্ছে। তবে কাজের নির্দিষ্ট অংশ শেষ না করতে পারলে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ হবে না। তাই বেশি সময় ধরে এ দিন কাজ হয়। যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার পরে যান চলাচল শুরু হয়।’’ যদিও যাত্রীদের অভিযোগ, সকালের পরেও কয়েক ঘণ্টায় মাঝে-মাঝেই মিনিট দশেক করে চালু লেনে যন্ত্র রেখে ঢালাইয়ের কাজ হয়েছে। সেই সময় যান চলাচল বন্ধ থেকেছে। আবার এত দিন কিছুক্ষণ অন্তর পর্যায়ক্রমে দু’দিক থেকে যানবাহন ছাড়ার নিয়ম থাকলেও এ দিন যানজটের ফলে তা সে ভাবে মানা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে, বাঁকুড়ার দিকে আশুড়িয়া মোড় পর্যন্ত এবং দুর্গাপুরের দিকে শ্যামপুর মোড় পর্যন্ত যানজট হয়। মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি নামায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে বলে দাবি যাত্রীদের।
বড়জোড়ার নতুন কাটাবাঁধ এলাকার যুবক আজমল মিদ্যা বলেন, “দুর্গাপুর থেকে ফিরছিলাম। বাসে ঘণ্টাখানেক আটকে থাকার পরে হেঁটে ব্যারাজ পার হয়ে উল্টো দিকে এসে বাস ধরি।’’ দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক উদয়শঙ্কর গুপ্ত মোটরবাইকে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “এমন ভাবে আটকে পড়েছিলাম যে মোটরবাইক ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরতেও পারছিলাম না। ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে হল।’’ দুপুরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। বড়জোড়ার কলেজ ছাত্র অর্কদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, দুর্গাপুরে যাওয়ার সময়ে মিনিট কুড়ি লেগেছে ব্যারাজ পার হতে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “আর যাতে এই রকম যানজট না হয় সে জন্য এক জন ইনস্পেক্টরকে সব সময় ব্যারাজে মোতায়েন রাখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy