—প্রতীকী চিত্র।
গত পাঁচ বছরে একের পর এক ভোটে শহরে খারাপ ফল হয়েছে তৃণমূলের। এ বার যেখানে বিজেপির হাত থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনটি পুনরুদ্ধার করেছে তার, সেই ভোটেও দুর্গাপুর পুরসভা এলাকায় পিছিয়ে রয়েছে তারা। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দুর্গাপুরে পুরভোট হতে পারে শীঘ্রই। আজ, সোমবার রাজ্যের পুর কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পুরভোটের আগে ওই বৈঠক থেকে কড়া বার্তা মিলতে পারে বলে তৃণমূলের একাংশের ধারণা। আবার, ২০১৭ সালের পুরভোটের 'সন্ত্রাস-ক্ষত' দূর করতে দুর্গাপুরে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূল সূত্রের। বিজেপির পাল্টা দাবি, স্বচ্ছ ভোট হলে দুর্গাপুর পুরসভায় তাদের জয় নিশ্চিত।
দুর্গাপুরে ২০১৭ সালের অগস্টে পুরভোটে ৪৩টি ওয়ার্ডের সব ক’টিই তৃণমূলের হাতে যায়। বিরোধীরা সেই ভোটে চরম সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। তৃণমূল অবশ্য সে কথা মানতে চায়নি। বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুরসভার দায়িত্ব গিয়েছে ৫ সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলীর হাতে। বিজেপির দাবি, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দুর্গাপুরের মানুষ পুরভোটের সন্ত্রাসের জবাব দিতে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে বার প্রায় ৭৬ হাজার ভোটে এই শহর থেকে ‘লিড’ পায় বিজেপি। এ বার লোকসভা ভোটের ফলাফলও তৃণমূলের জন্য আশাব্যঞ্জক নয় বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। দুর্গাপুর পুর এলাকায় বিজেপি ৪৫.২৩% এবং তৃণমূল ৪১.৪৫% ভোট পেয়েছে। ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে মাত্র ১০টিতে।
এই পরিস্থিতিতে, কয়েক মাসের মধ্যে পুরভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। তৃণমূল সূত্রের দাবি, তার আগে ঘর গোছাতে জোরকদমে মাঠে নেমেছেন নেতৃত্ব। দলের ভোটকুশলী সংস্থা ৪৩ জন প্রাক্তন পুর প্রতিনিধির কাজকর্ম খতিয়ে দেখেছে। অনের বিরুদ্ধে ‘নেতিবাচক’ রিপোর্ট উঠে এসেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে তোলাবাজির মতো অভিযোগও মিলেছে বলে দাবি। লোকসভা ভোটের সপ্তাহখানেক আগে একাধিক প্রাক্তন পুর প্রতিনিধিকে প্রচারে যেতেও নিষেধ করা হয়। ভোটের ফলে দেখা যায়, ‘হেভিওয়েট’ প্রাক্তন পুর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি, পুরসভার বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলীর একাধিক সদস্যের ওয়ার্ডেও বিজেপির কাছে পিছিয়ে রয়েছে দল।
তৃণমূল নেতাদের অনেকের দাবি, শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশি, আলো-সহ নানা পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। রাজ্য সরকারের সামাজিক নানা প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন শহরবাসী। অথচ, ভোটের সময়ে বাসিন্দারা মুখ ফিরিয়ে থাকছেন। এই হাল পাল্টাতে প্রার্থিতালিকা বাছাইয়ে নতুন মুখকে প্রাধান্য দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এমনকি, এই শহরের বাসিন্দা নন, এমন কোনও বিধায়ককে মেয়র পদপ্রার্থী করে ভোটে লড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
শ্রমিক সংগঠনের নাম করে তোলাবাজির অভিযোগ বার বার উঠেছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। শহরে শ্রমিক শ্রেণি ভোটে অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি হয়। তৃণমূলের একাংশের দাবি, শ্রমিক স্বার্থে আন্দোলনের সময়ে কার্যত খুঁজে পাওয়া যায় না দলের শ্রমিক নেতৃত্বকে। কিন্তু কারখানায় লোক নিয়োগের সময়ে আখের গোছাতে নেমে পড়ে একাধিক গোষ্ঠী। ভাবমূর্তি ঠিক করতে পুরভোটের আগে অভিযুক্ত শ্রমিক নেতাদের বিষয়ে কড়া হাতে রাশ চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব।
দুর্গাপুর শহরের উন্নয়নে তৃণমূল বদ্ধপরিকর, সেই বার্তা দিতে ডিএসপি টাউনশিপে দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কার্যালয়ের বাইরে লাগানো হয়েছে ‘আমাদের প্রাণের শহর দুর্গাপুর’ লেখা আলোকজ্জ্বল বোর্ড। জনসংযোগ নিবিড় করতে বাড়ি-বাড়ি বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে জয়ের জন্য শুভেচ্ছা কার্ড পাঠানোর পরিকল্পনা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিটি ওয়ার্ডে নাগরিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে বলে। সেখানে দলের সাংসদ, বিধায়ক-সহ নেতাদের পাশাপাশি থাকবেন ভোটকুশলী সংস্থার কর্মীরা। নাগরিকদের অভিযোগ, দাবিদাওয়া নথিবদ্ধ করা হবে। তা একত্র করেই পুরভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করবে দল।
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের যদিও দাবি, “এ সব করে কিছু হবে না। ২০১৭ সালের পরে এই শহরে তৃণমূলকে কেউ বিশ্বাস করে না। লোকসভা ভোটের ফলেও তা স্পষ্ট। সন্ত্রাস ছাড়া তৃণমূল জিততে পারবে না। তবে এ বার তেমন হলে প্রতিরোধ হবেই।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাফল্য পেয়েছি। একই ভাবে পুরভোটেও এগোব। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাব, মানুষের কথা শুনব। আশা করি সাফল্য পাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy