রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ গ্রাহক থেকে উজ্জ্বলা যোজনার উপভোক্তারা। মঙ্গলবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পথে নামল তৃণমূল। ওষুধ থেকে রান্নার গ্যাস, ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ ব্যতিব্যস্ত বলে দাবি তৃণমূল-সহ নানা পক্ষের।
রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে মঙ্গলবার আসানসোলের ইসমাইল মোড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তৃণমূল। এই কর্মসূচিতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার রেখে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখানো হয়। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘উজ্জ্বলা যোজনা কোথায় গেল? অনুষ্ঠানের আড়ালে চুপিসারে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বেড়ে গেল।’ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর দেবাশিস সরকার। তাঁর দাবি, ‘‘চুপিসারে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর কয়েক দিন আগে টোল ট্যাক্সও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কখনও ওষুধের দাম বাড়ছে, কখনও গ্যাসের দাম বাড়ছে। মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির কারণে।’’
গত বেশ কয়েক বছর ধরে উজ্জ্বলা গ্যাসের গ্রাহকেরা, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের মহিলারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। কাঁকসার বাসিন্দা মালতি টুডু বলেন, ‘‘আমরা বেশির ভাগ শুকনো কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে বছরে চারটির বেশি কিনতে পারি না। আবার দাম ৫০ টাকা করে বাড়ানো হল। এখন কী করব, তা আমাদের ভাবতে হবে।’’
প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাপ্রাপ্ত ক্রেতাদের এত দিন রান্নার গ্যাসের একটি সিলিন্ডার কিনতে ৫০৩ টাকা দিতে হত। দাম বৃদ্ধির ফলে তাঁদের ৫৫৩ টাকা করে দিতে হবে। এর জেরে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকেরা। দুর্গাপুরের পলাশডিহায় ২০১৯ সালে এক দিনে ৪৫টি দুঃস্থ আদিবাসী পরিবারের হাতে উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগ তুলে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার আধিকারিকেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেই গ্রাহকদের এক জন মঙ্গলবার বলেন, ‘‘প্রথম যখন গ্যাসের সংযোগ পেয়েছিলাম, খুব আনন্দ হয়েছিল। ধোঁয়া থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। কিন্তু দিন দিন যে হারে সিলিন্ডারের দাম বাড়ছে, তাতে সংযোগ রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ছে। ফের উনুন জ্বালিয়ে রান্না করার কথা ভাবতে হবে মনে হচ্ছে।’’
দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের বাসিন্দা, সাধারণ সিলিন্ডারের গ্রাহক স্নেহাংশু বসাক বলেন, ‘‘নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে। তার পরে এ ভাবে হেঁশেলেও যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে বলার কিছু থাকে না! লাফিয়ে লাফিয়ে গ্যাসের দাম শুধু বেড়েই চলেছে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মুখে বিকাশের কথা বলে। অন্য দিকে, নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস— সবের দাম বাড়িয়ে নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘দিনের পর দিন জ্বালানি তেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্র। এই সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। শুধু ধনীদের কথা ভাবে।’’ বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দাম ঠিক করা হয়। কখনও কমে, কখনও বাড়ে। তবে কম হলে কেউ হইচই করেন না!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)