পিউ দাস। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা দিয়ে হাঁটলে কেউ মুখ টিপে হাসে, কেউ গাল টিপে দিয়ে চলে যায়। কেউ উপহাসও করে। কারণ সমাজের চোখে ‘স্বাভাবিক’ নন ওই যুবতী। তিনি বামন। কিন্তু একা হাতে টিউশন পড়িয়ে, গয়না বানিয়ে, অসুস্থ বাবা-মার দেখভাল করে সেই বামনত্বকে হেলায় উড়িয়েছেন তিনি। নারী দিবসে, পিউ দাসের লড়াই কুর্নিশ জানাল কাটোয়ার একটি সংস্থা।
অনাদিবাবুর বাগান এলাকায় দু’কামরার ঘরে ভাড়া থাকেন পিউরা। বাবা অনিলকুমার দাস অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। তিনি ও তাঁর স্ত্রী শুভ্রাদেবী দু’জনেই হৃদরোগী। সামান্য পেনশনের টাকায় চিকিৎসা, সংসার চালানো রীতিমতো অসম্ভব। তাঁদের ভরসা মেয়ে পিউ। স্নাতক পিউ টিউশন পড়িয়ে, কচিকাঁচাদের কম্পিউটার শিখিয়ে সংসারের দায়িত্ব বইতেন। তবে কোথায় আসাযাওয়া করতে যে কোনও যানবাহনে ওঠা, উঁচু টুল না হলে মুশকিলে পড়তেন তিনি। তবুও লড়াই চলছিল। বছর দুয়েক আগে বন্ধু মৌমিতা রায়ের আবদারে সুতো, পুঁতি দিয়ে তার নাচের অনুষ্ঠানের জন্য গয়না বানিয়ে দেন পিউ। শুরু হয় আর এক লড়াই। সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়ি, তুলোর বল, ঘুঙুরের মতো নানা জিনিস দিয়ে তৈরি গয়নার সম্ভার সাজিয়ে একটি পেজ খুলেছেন তিনি। যেমন বরাত আসে ঠিক তেমনই পছন্দসই গয়না বানিয়ে দেন তিনি। পিউয়ের কথায়, ‘‘খুব একটা বাইরে না বেরিয়েই বাবা-মায়ের মাসিক ওষুধের খরচ, ঘরভাড়া দিতে অনেকটাই সুবিধা হয়।’’
তবে এই লড়াইয়ের জোর একদিনে আসেনি। পিউ জানান, স্কুলে পড়ার সময় হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন। উঁচু জিনিস ধরতে , আসতে যেতে খোঁটা শুনতে হত। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে এমন ভাবে তাকাতো যেন আমি ভিন গ্রহের প্রাণী। হীনমন্যতায় ভুগতাম। পরে দেখলাম নিজে নিজেকে ভাল না বাসলে অন্য কেউ সম্মান করবে না।’’ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছোটদের ছবি’ দেখেও জোর পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এ দিন সংবর্ধনা নেওয়ার পরে পিউ বলেন, ‘‘সমাজ দেগে দেয় কে স্বাভাবিক, আর কে নয়! কিন্তু সবাইকে যোগ্য সম্মান ও মেয়েদের নিজের মতো করে বাঁচতে দিলে তবেই নারী দিবস সার্থক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy