বাঁ দিক থেকে, রাহুল, শাহানারা ও বিক্রম। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসার টাকা জোগাড় না হওয়ায় বাঁচেননি ক্যানসার আক্রান্ত বাবা। তারপর থেকে বিড়ি বেঁধে সংসার চালান মা। পড়ার ফাঁকে মাকে সাহায্য করে বর্ধমান উদয়পল্লী শিক্ষা নিকেতন হাইস্কুলের রাহুল দেব বালা। অভাবের সঙ্গে লড়েই এ বার মাধ্যমিকে ৯২.৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে।
তবে স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও হাসি নেই ছেলের মুখে। মা-ছেলের একটাই চিন্তা, এর পরের পড়াশোনা কী ভাবে হবে। রাহুলের মা চুমকিদেবী জানান, ওর বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর। তিনিও দিন-রাত কাজ করে সেই চেষ্টা করছেন। উদয়পল্লির রবীন্দ্র কলোনির টালির ছাদ দেওয়া মাটির বারান্দায় বসে কাজ করেন চুমকিদেবী। বর্ষার জল পড়ে বই ভিজে যায় রাহুলের। ছেলেটাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিতে বৃদ্ধ দাদু পরিমলবাবুও মাটি কাটার কাজে যান। রাহুল বলে, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে এখনই ভাবছি না। আপাতত বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে চাই।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপাল ঘোষালের আশ্বাস, ‘‘এই ভাবে লড়াই করে এরকম মেধাবী ছাত্র খুব কম দেখেছি। ওর পড়ার জন্য আমরা সব রকম সাহায্য করব।’’
অভাবের সঙ্গে লড়াই করে নজর কেড়েছে মঙ্গলকোটের কুড়ুম্বা গ্রামের শাহানারা খাতুনও। পূর্ব গোপালপুর এসএমপি বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রীর মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬১২। মাটির এক কামরার বাড়িতে তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন ভাগচাষি জাহিরুদ্দিন শেখ। বড় মেয়ে শাহানারার ভাল ফলের কৃতিত্ব পুরোটাই তার নিজের আর স্কুলের বলে জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মতিউল্লাহ বলেন, ‘‘হাওড়ায় আল আমিন মিশনে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হবে ও। ওকে সবরকম সাহায্য করব।’’ ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে শাহানারা।
কাটোয়ার নারায়ণপুরের বিক্রম মণ্ডলও সুদপুর হাইস্কুল থেকে ৬০০ পেয়েছে। বিক্রমের বাবা বিকাশবাবু মারা যান বছর চারেক আগে। তারপর থেকেই লড়াই শুরু। বিঘা পাঁচেক জমিতে ধান চাষ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন মা করবী মণ্ডল। তিন জন বিনা বেতনে পড়ান বিক্রমকে। করবীদেবী বলেন, ‘‘স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব ছিল না।’’ বিজ্ঞান নিয়ে শিক্ষক হতে চায় বিক্রম। তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের আর আমার স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy