সাপে কাটায় কিশোরের মৃত্যু।—প্রতীকী চিত্র।
চলতি সপ্তাহেই সাপে কাটা রোগীদের বাঁচাতে কী ভাবে তৎপর হতে হবে, তা নিয়ে প্রচার শুরু করেছে পূর্বস্থলী ১ ব্লক, কালনা মহকুমা প্রশাসন। অথচ সেই কালনাতেই ফের সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যু হল কিশোরের। অভিযোগ, সাপে কাটার পরে ওই কিশোরকে দু’জন ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিশোরের বন্ধু ও চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, প্রায় ন’ঘণ্টা ধরে কিশোরকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল।
শনিবার কালনার ছোট স্বরাজপুর গ্রামে বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিল রজত বর্মন (১৪) নামে ওই কিশোর। রাত ১২টা নাগাদ সাপে কাটে রজতকে। ধাত্রীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ওই কিশোরের দুই সহপাঠী গোবিন্দ মণ্ডল ও প্রীতিশ সরকার জানায়, সাপে কাটার পরে রজতকে বাড়ির অদূরে রাত দুটো নাগাদ এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ঝাড়ফুঁকে’ কাজ না হওয়ায় ওই ওঝা বলে, ‘অন্য ওঝার কাছে ছেলেকে নিয়ে যান’। ফের বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে, রবিবার ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ ধর্মডাঙা গ্রামে অন্য এক ওঝার কাছে রজতকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও কোনও লাভ হয়নি। উল্টে রজতের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে।
শেষমেশ সকাল ন’টা নাগাদ রজতকে নিয়ে যাওয়া হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। গোবিন্দ, প্রীতিশ এবং হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, প্রায় ন’ঘণ্টা ধরে সময় নষ্ট না করে হাসপাতাল বা কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই কিশোরকে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো তাকে প্রাণে বাঁচানো যেত। রজতের বাবা অমলবাবুও এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘ছেলেটা পড়ে পড়ে মারা গেল। হাত জোড় করে বলছি, আর কেউ, এমন পরিস্থিতিতে পড়লে ওঝার কাছে যাবেন না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধর্মডাঙা গ্রাম রজতের বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে। কালনা মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব সাড়ে সাত কিলোমিটার। সহপাঠীদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘আর মাত্র পাঁচশো মিটার বেশি গিয়ে হাসপাতালে বন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হলে ও বেঁচে যেত।’’
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দশ দিনে শুধু কালনা মহকুমাতেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘সাপের ছোবলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই মৃত্যু আটকানো সম্ভব। সচেতনতা তৈরি না হওয়াতেই এই হাল।’’ মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার দাবি, ‘‘সর্পদষ্ট হলে কী তৎপরতা দরকার, সে বিষয়ে পূর্বস্থলীতে আলোচনাসভা হয়েছে। বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধরাও সক্রিয়। গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যায় শিবির, সভা আয়োজিত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy