বাড়িতে সায়নী। নিজস্ব চিত্র।
সময় যত গড়াচ্ছে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ দাবি তত তীব্র হচ্ছে। এ বার আর জি কর হাসপাতালের নিহত চিকিৎসক তরুণীর খুনের বিচার চেয়ে সরব হলেন সদ্য নর্থ চ্যানেল জয়ী কালনার সাঁতারু সায়নী দাস। শনিবার রাত ৮টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামে তাঁর বিমান। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা পোস্টার হাতে বিমানবন্দরের বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় পঞ্চসিন্ধুজয়ী সাঁতারুকে।
রবিবার কালনা শহরে নিজের বাড়িতে বসে সায়নী বলেন, ‘‘বিদেশে থাকলেও আর জি কর হাসপাতালের ওই ঘটনার খবর দেখে শিউরে উঠতে হয়েছিল। ভয়ও পেয়েছি। আমি চাই প্রকৃত দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে এ ধরনের অপরাধ বার বার না ঘটে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এখন আমি অসুস্থ। মেরুদণ্ডে আঘাত রয়েছে। তাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে পারছি না। তবে প্রতিবাদীদের প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে।’’
সম্প্রতি নর্থ চ্যানেল জয় করেছেন ‘কালনার জলকন্যা’ নামে পরিচিত সায়নী। তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য জাপানের সুগারু এবং স্পেন ও মরক্কোর মাঝে জিব্রাল্টার চ্যানেল জয়। এ দিন তিনি তাঁর সপ্তসিন্ধু জয়ের লক্ষ্যের কথাও জানান। পরের বছর বিপদসঙ্কুল ১৮ কিলোমিটারের জিব্রাল্টার চ্যানেল জয় করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। ২০১৭-এ সায়নী ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন। তার পরে একে একে তিনি অতিক্রম করেছেন ক্যাটালিনা, রটনেস্ট, মলোকাই ও কুকস্ট্রেট চ্যানেল। ভারতের প্রথম মহিলা হিসেবে গত ৩০ অগস্ট তিনি নর্দান আয়ারল্যান্ড থেকে স্কটল্যান্ড পর্যন্ত নর্থ চ্যানেল অতিক্রম করেন। ৪৮ কিলোমিটার কনকনে ঠান্ডা জলে তাঁর অভিযান শুরু হয় নর্দান আয়ারল্যান্ডের দোনাগাছি থেকে। ১৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড সাঁতরে স্কটল্যান্ডের পোর্টপেট্রিকে আসেন তিনি। শনিবার রাতে বিমানে কলকাতায় পা দিতেই সায়নীকে ঘিরে উচ্ছ্বাস শুরু হয়। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ মা-বাবাকে নিয়ে কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাড়িতে ফেরেন তিনি। সকাল থেকে বহু মানুষ তাঁকে বাড়িতে এসে সংবর্ধনা দেন।
কেমন ছিল এ বারের অভিযান?
সায়নী জানান, এ বার বেশ কিছু প্রতিকূলতা ছিল। শুরু থেকে জলে ব্যাপক জেলিফিসের হামলা শুরু হয়। তাতে চোখ, মুখ-সহ শরীরের নানা জায়গায় জ্বলুনি হয়। কনকনে ঠান্ডায় হাত অসাড় হয়ে যাওয়ার কারণে সাঁতার কাটতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। শেষ তিন কিলোমিটার স্রোতের টানে ক্রমশ ডান দিকে সরে যেতে হচ্ছিল তাঁকে। এক সময়ে শরীর আর কষ্ট নিতে পারছিল না। তবু এক বারও মনে হয়নি, তিনি পারবেন না। পিছনের বোটে ছিলেন সায়নীর মা-বাবা ও অবজ়ার্ভার। সকালে যাত্রা শুরু করে লক্ষ্যে পৌঁছতে অন্ধকার নেমে আসে। চ্যানেল জয় করার পরে অসাড় শরীরে জড়িয়ে দেওয়া হয় কম্বল এবং ফয়েল। গরম চা খেতেই শুরু হয় বমি। তাঁকে সুস্থ করেন অবজ়ার্ভার। সায়নী জানান, ওই দিন কাজাখস্তান, আয়ারল্যান্ড, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন সাঁতারু নর্থ চ্যানেল জয় করতে নেমেছিলেন। দু’জন মাঝপথে হাল ছাড়েন। এক জন গন্তব্যে পৌঁছলেও তাঁর সময় লাগে সায়নীর থেকে বেশি।
সায়নী বলেন, ‘‘এ বারের সফরে ভুলব না স্থানীয় সুইমিং কমিউনিটিকে। টুপি, ভেসে থাকার বেলুন, গরম জল রাখার পাত্র-সহ নানা জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাঁরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও সহযোগিতা করেছেন।’’
সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাস জানিয়েছেন, বহু মানুষের সহযোগিতায় মেয়ে একে একে পাঁচটি চ্যানেল জয় করতে পেরেছেন। সায়নী পরের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন। গোটা পরিবারের বিশ্বাস, সপ্তসিন্ধুর বাকি দু’টি চ্যানেলও তিনি জয় করবেন। রাধেশ্যামের আবেদন, ‘‘ক্রীড়াক্ষেত্রে অ্যাডভেঞ্চারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পুরস্কার দেয়। তবে যাঁরা পুরস্কার পান, তাঁদের আর সে ভাবে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই দেখে না। এই ধরনের প্রতিভাদের উৎসাহিত করলে ক্রীড়াক্ষেত্রে আরও অনেক প্রতিভা উঠে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy