আদালতে সুদীপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
কারও সঙ্গে কোনও বিবাদ হলেই ফাঁসানোর চেষ্টা করেন তিনি, বিচারককে হুমকি-চিঠির ঘটনার অভিযোগে ধৃত সুদীপ্ত রায় সম্পর্কে এমনই দাবি বর্ধমান আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, সুদীপ্তের পাঠানো ‘বেনামি’ চিঠির জেরে আদালতের এক সিনিয়র আইনজীবীর বাড়িতে সিবিআই অভিযান হয়, নোটারি পাবলিক অফিসার থেকে সরকারি আইনজীবীর পদ চলে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছিল। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বধূ নির্যাতন থেকে জালিয়াতি, প্রতারণার অন্তত ১৫টি মামলা ঝুলছে আইনজীবী সুদীপ্তের বিরুদ্ধে।
আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারককে হুমকি-চিঠির প্রেরক হিসেবে যাঁর নাম ছিল, পূর্ব বর্ধমানের এগজিকিউটিভ আদালতের আপার-ডিভিশন ক্লার্ক (ইউডিসি) সেই বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে সুদীপ্তের উপরে তাঁর সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন। আসানসোলের দক্ষিণ থানা বাপ্পার সই করা নথি সংগ্রহ করে। পুলিশ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদেও বাপ্পা অভিযোগ করেন, এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘জালিয়াতি’ আটকে যাওয়ায় তাঁর উপরে সুদীপ্তের রাগ ছিল। ঘটনাচক্রে, হুমকি-চিঠির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই সুদীপ্ত তাঁকে কটূক্তি করেন, রাস্তায় হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের দাবি, হুমকি-চিঠি কাণ্ডে শুধু নয়, সই-সিলমোহর জাল থেকে মাদক-মামলা, বধূ নির্যাতন-সহ নানা অভিযোগে জড়িয়ে জেলে গিয়েছিলেন সুদীপ্ত। জেলা পুলিশ ও বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৭ মার্চ সুদীপ্তের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা হয়। তাঁর পাঁচ বছর বাদে স্ত্রীর সই জাল করে এককালীন চার লক্ষ টাকা খোরপোশ দেওয়া হয়েছে বলে আদালতকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া, ফের বধূ নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয় বর্ধমান থানায়। বিচারব্যবস্থার নথিতে ‘গণ্ডগোল’ ঘটানোর অভিযোগেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল।
বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, আদালতের এক সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে ‘মনোমালিন্যের’ কারণে ওই আইনজীবীর সই জাল করে আইন বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সুদীপ্তের বিরুদ্ধে। চিঠিতে বলা হয়, তিনি আর সরকারি আইনজীবী থাকতে চান না। ওই আইনজীবীর দাবি, “আইন বিভাগ থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে আমি তো আকাশ থেকে পড়েছিলাম!” তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সুদীপ্তকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া, সংশোধনাগারে থাকাকালীন তাঁর কাছ মাদক উদ্ধার, ২০১৯ সালে তাঁর কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধারের অভিযোগও ওঠে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বর্ধমান থানাতেই প্রায় ১২টি মামলা ঝুলছে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে।’’ সোমবার গভীর রাতে আসানসোল দক্ষিণ থানা ও বর্ধমান থানা যৌথ ভাবে বর্ধমানের বড়নীলপুর মোড়ে সুদীপ্তের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। গোটা বাড়ি সিসি ক্যামেরায় মোড়া। বাড়ির ভিতরে উঠোনেও সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পড়শিদের একাংশের দাবি, তাঁদের সঙ্গে সুদীপ্তের সম্পর্ক ভালো ছিল না। সুদীপ্তের মা অর্চনাদেবীর অবশ্য দাবি, “আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বলে বারবার ফাঁসানোর চেষ্টা হয়।’’ বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক সদন তা বলেন, “আমাদের সংগঠনের সঙ্গে ওই আইনজীবীর দীর্ঘদিন কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ওঁর সঙ্গে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy