কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট আটকে বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
‘ফি’ বৃদ্ধির প্রতিবাদে বুধবার রাতভর আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার চৈতালি দত্ত-সহ সাত জন কর্মীকে আটকে বিক্ষোভ-অবস্থান করলেন পড়ুয়াদের একাংশ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিলে অবস্থান-বিক্ষোভ ওঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের এই আন্দোলন একেবারেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, এখন অতিমারির প্রকোপ চলছে। এই অবস্থায় সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এক দল পড়ুয়া বিক্ষোভ-অবস্থান করেছেন। মানা হয়নি স্বাস্থ্য ও দূরত্ব-বিধি। তাঁর দাবি, ‘‘ইউজিসির তরফে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে ফল প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক, কর্মীরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে ডেপুটি রেজিস্ট্রার-সহ কয়েকজনকে রাতভর আটকে রেখে বিক্ষোভ-অবস্থান পালন খুবই অমানবিক।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে জানি না। খোঁজ নেব। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত খুব পরিষ্কার, রাজ্যের কোথাও, কোনও ‘ফি’ বাড়ানো যাবে না।’’
এই আন্দোলন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। টিএমসিপির জেলা সম্পাদক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সম্পাদক আদর্শ শর্মা বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের এই দাবিকে সমর্থন করছি। তবে পরিস্থিতির বিচারে যা ঘটেছে, তা উচিত ছিল না।’’ এসএফআইয়ের জেলা আহ্বায়ক রাহুল মণ্ডলের মন্তব্য, ‘‘কর্তৃপক্ষের আচরণে পড়ুয়ারা বিপর্যস্ত। তাই এই কাণ্ড ঘটে গিয়েছে।’’ এবিভিপির জেলা সভাপতি শুভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়াদের ন্যায্য দাবি ঝুলিয়ে রাখার জন্যই এই পরিণতি ঘটেছে। উভয় পক্ষের উচিত নমনীয়তার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করা।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ‘ফি’ বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আন্দোলন চলছে। তবে রাতভর আটকে রাখার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে
এই প্রথম।
বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের তরফে অর্পিতা সরকার জানান, ‘ফি’ বৃদ্ধি সংক্রন্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ বিভিন্ন বিভাগের চতুর্থ সিমেস্টারের স্নাতকোত্তর পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানান। অভিযোগ, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি কর্তৃপক্ষ। এর পরেই অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। প্রশাসনিক ভবনের সামনে কোল্যাপ্সিবল গেট আটকে শুরু হয় এই কর্মসূচি। ভিতরে আটকে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার চৈতালি দত্ত-সহ সাত জন কর্মী। পড়ুয়ারা জানিয়ে দেন, তাঁদের সঙ্গে কথা না বললে অবস্থান তোলা হবে না।
পড়ুয়ারা জানান, তাঁদের ‘ফি’ এক ধাক্কায় ৩৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,৩৫০ টাকা করা হয়েছে। এই অতিমারির সময়ে এত টাকা তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক পড়ুয়াকে এক হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেন। পড়ুয়ারা এর পরে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসেন। তবে তাঁদের অভিযোগ, অনেক পড়ুয়া এখনও পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাননি। চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা ‘ফি’ মকুব করার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি। ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃতীয় সিমেস্টারের ফল প্রকাশের কথা থাকলেও তা বেরোয়নি। এ ছাড়া, দ্বিতীয় সিমেস্টারের পড়ুয়াদেরও ‘ফি’ ১,৩৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৭৫ টাকা করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি। এই অভিযোগগুলি নিয়ে বুধবার তাঁরা আলোচনা করতে যান। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কথাই বলা হয়নি বলে অভিযোগ।
চৈতালিদেবী এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। তবে রেজিস্ট্রার শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘গত ৬ সেপ্টেম্বর পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমস্যাগুলি সমাধানের উপায় বার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পড়ুয়াদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানদের মাধ্যমে পড়ুয়াদের আবেদনপত্রও নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, অবস্থানরত পড়ুয়াদের ফের আলোচনায় ডাকা হবে, এই প্রস্তাব দিয়ে অবস্থান
তোলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy