যানজটে জেরবার। প্রতিদিন সকালে দুর্গাপুর ব্যারাজে যাওয়ার রাস্তায় দেখা যাচ্ছে গাড়ির এমনই লম্বার সারি। ছবি: বিকাশ মশান।
দু’কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে ঘণ্টাখানেক পার। কখনও বা তারও বেশি। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারাজের রাস্তায় এমন তীব্র যানজটে নাকাল হচ্ছেন হাজার-হাজার যাত্রী। এক দিকে উৎসবের মরসুমে বিভিন্ন রাস্তায় ‘নো-এন্ট্রি’ চালু রাখা, অন্য দিকে আবার রাস্তার কিছু অংশে সংস্কার চলার জন্য এই পরিস্থিতি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে যানজট কমে যাবে বলে আশ্বাস কর্তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালের দিকে, বিশেষত অফিস যাওয়া-আসার সময়ে ব্যারাজের রাস্তায় যানজট প্রায় নিত্য ঘটনা। কিন্তু দুর্গাপুজোর আগে থেকে সেই যানজট বড় আকার নিয়েছে। ১৯৫৫ সালে দামোদরের উপরে তৈরি এই ব্যারাজটি লম্বায় প্রায় সাতশো মিটার। ব্যারাজ গড়ে ওঠার ফলে দুর্গাপুর-বাঁকুড়া যোগাযোগ সুগম হয়। আবার উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে যাতায়াতের একটি পথও খুলে যায়। ব্যারাজের দু’পাড়ে দুর্গাপুর ও বড়জোড়া শিল্পাঞ্চল। প্রতি দিন হাজার-হাজার গাড়ি, ভারী ট্রাক যাতায়াত করে এর উপর দিয়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এখন ভোর থেকে যানজট লেগে থাকছে। দুর্গাপুরের দিকে সুকুমারনগর কলোনির আগে পর্যন্ত এবং বাঁকুড়ার দিকে প্রায় প্রতাপপুর পর্যন্ত সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি-মোটরবাইক।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রিবাহী বাস, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার ফলে অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনে রাস্তায় বেরনো মানুষজন আটকে থাকছেন। দুর্গাপুর থেকে বাসে নিয়মিত বাঁকুড়া যাতায়াত করেন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী নাড়ুগোপাল বসু। তিনি বলেন, ‘‘প্রচণ্ড যানজটে ব্যারাজ পেরোতে ঘণ্টা পেরিযে যাচ্ছে।’’ বেলিয়াতোড় থেকে দুর্গাপুরের একটি কারখানায় কাজে আসেন সতীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘চতুর্থীর দিন থেকে যানজট খুব বেড়ে গিয়েছে। দুপুর ২টোর পরে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হচ্ছে।’’ দুর্গাপুর থেকে পুরুলিয়াগামী বাসের এক যাত্রী পূর্ণিমা শ্যাম বলেন, ‘‘যানজট এড়াতে আমাদের বাস অন্য একটা ‘শর্টকাট’ রাস্তা ধরে ব্যারাজের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তার পরেও শুধু ব্যারাজ পেরোতে আধ ঘণ্টার বেশি লেগেছে।’’
কেন এই পরিস্থিতি? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎসবের মরসুমে ভিড় সামলাতে দুর্গাপুর শহর ও লাগোয়া এলাকার নানা রাস্তায় ‘নো এন্ট্রি’ করে দেওয়া হয়। সাধারণত ভোরের দিকে নিষেধাজ্ঞা তোলা হয়। তার পরে যানবাহনের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। এই সময় থেকে যাত্রিবাহী বাস চলাচল শুরু করে। ফলে, চাপ আরও বাড়ে। এরই মধ্যে আবার দুর্গাপুরের দিকে রাস্তার বেশ কিছু অংশে তাপ্পি মারার কাজ চলেছে। বাঁকুড়ার দিকের রাস্তার একাংশ ভালে হলেও বাকি অংশে খানাখন্দ রয়েছে। ফলে, যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। দুর্গাপুর থেকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াগামী যাত্রিবাহী বাস যানজট এড়াতে বাঁকুড়া রোড না ধরে বীরভানপুরের ভিতর দিয়ে গিয়ে ব্যারাজে ওঠার চেষ্টা করছে। তাতে ব্যারাজের মুখে চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এ সবের সঙ্গে লেন ভাঙার অভ্যাস তো রয়েছেই। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। সেচ দফতরের দুর্গাপুরের এক আধিকারিক জানান, পুলিশের পাশাপাশি টোল ট্যাক্স আদায়কারী কর্মীরাও যানজট নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও মাঝে-মাঝেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তবে প্রশাসনের আশ্বাস, ধাপে-ধাপে ‘নো এন্ট্রি’ তুলে নেওয়া হচ্ছে। তাই আগের মতোই এ বার রাতে শিল্পাঞ্চল থেকে বেরোনো লরি ও ট্রাক যাতায়াত করতে পারবে। সকালে রাস্তার উপরে চাপ কমবে। রবিবার রাস্তা সারানোর কাজও শেষ হয়েছে। বাস যাতে বীরভানপুরের রাস্তা না ধরতে পারে সে ব্যাপারে নজরদারি শুরু হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই যানজটের তীব্রতা কমে যাবে বলে আশা প্রশাসনের কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy