Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জঞ্জাল দেখলেই হাতে ঝাড়ু জানকী মাহাতোর

পরনে খাদির ধুতি। মাথায় গাঁধী টুপি। ডান হাতে, ঝাঁটা। বাঁ হাতে, একটা ব্যাগ। যেখানেই আবর্জনা ডাঁই দেখছেন, নিমেষের মধ্যে তা সাফ করতে নেমে পড়ছেন। তিনি জানকী মাহাতো। তাঁর দাবি, এ যাবৎ প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ তিনি সাফ করেছেন!

সাফাই: কুলটির রাস্তায় ঝাড়ু হাতে জানকী মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

সাফাই: কুলটির রাস্তায় ঝাড়ু হাতে জানকী মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৭
Share: Save:

পরনে খাদির ধুতি। মাথায় গাঁধী টুপি। ডান হাতে, ঝাঁটা। বাঁ হাতে, একটা ব্যাগ। যেখানেই আবর্জনা ডাঁই দেখছেন, নিমেষের মধ্যে তা সাফ করতে নেমে পড়ছেন। তিনি জানকী মাহাতো। তাঁর দাবি, এ যাবৎ প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ তিনি সাফ করেছেন!

সেনর‌্যালে কারখানায় এক সময় কাজ করতেন জানকীবাবু। সেই সূত্রেই ৭৩ বছরের জানকীবাবু এক সময় আসানসোলের সেনর‌্যালেতে থেকেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার পরে ১৯৯৯-এ স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নেন তিনি। ফিরে যান নিজের ‘দেশের বাড়ি’, বিহারের চম্পারনে। তবে তাঁর ছেলেমেয়েরা এখনও থাকেন কুলটিতেই। তাই সুযোগ পেলেই তিনি চলে আসেন পুরনো শহরে। কিছু দিন আগে কুলটির রানিতলায় মেয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।

এক দিন রাস্তায় বেরিয়েছিলেন কী এক প্রয়োজনে। পথেই বিপত্তি! স্থানীয় একটি স্কুলের দরজার সামনে দেখলেন ‘এত্তা জঞ্জাল’। পুরনো স্বভাবটা চাগাড় দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে জোগাড় করে নিয়ে এলেন একটা ঝাড়ু। আশেপাশের পথচলতি কিছু লোক জন দাঁড়িয়ে পড়লেন।

কিন্তু এই বয়সে কী এমন তাগিদ এলাকা সাফাইয়ের?

জানকীবাবুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, বিহারে দেশের বাড়ি হোক বা যেখানেই তিনি যান, আবর্জনা দেখলেই গা যেন গুলিয়ে ওঠে। কালবিলম্ব না করে নেমে পড়েন সাফাইয়ের কাজে।

জানকীবাবু জানান, ২০১৫-র ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাক দেওয়া ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ তাঁর এই কাজের অন্যতম প্রেরণা। সাফাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ নজর দেন, স্কুল ও হাসপাতাল চত্বর। কেন? তাঁর কথায়, ‘‘এই দুই জায়গায় নোংরা জমলে মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যে সব থেকে বেশি থাকে।’’

এই কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ে তাঁকে পথচলতি মানুষের কটূক্তির মুখেও পড়তে হয়েছে। তবে সে সবে তাঁর ভ্রূক্ষেপ নেই। জানকীবাবুর দাবি, ‘‘কিছু মানুষ জন আমার কাজ দেখে আগ্রহ ভরে দাঁড়িয়েও পড়েন। সেটা ভাল লাগে দেখে।’’

তবে এই কাজ করতে গিয়ে পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন শুরু থেকেই। শ্বশুরমশাইয়ের এমন কাজে খুশি জামাই ইন্দ্রদেব মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিবার ওনার জন্য গর্বিত।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, ‘‘জানকীবাবুর কাজ দেখে আমরা যদি কিছু শিখতে পারি, সেটাই হবে ওনার সব থেকে বড় স্বীকৃতি।’’

জানকীবাবুর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আসানসোল পুরসভার অধ্যক্ষ অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওনার মতো আমরা সকলেই যদি সচেতন হতাম, তবে আসানসোলকে ‘ক্লিন সিটি’ করাটা অনেক সহজ হয়ে যেত। ওনাকে কোনও প্রচারের কাজে লাগানো যায় কি না, সেটাও ভেবে দেখা হবে।’’ তাঁর এই কাজ কোনও ভাবে কাজে আসলে, তিনিও যে খুশি হবেন, সেটা জানেত ভুললেন না মানুষটি।

অন্য বিষয়গুলি:

Kulti Swachh Bharat Abhiyan Clean
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE