ডান দিকে, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাঁ দিকে, উত্তম সেনগুপ্ত। ছবি সৌজন্য: ফেসবুক
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গ্রুপ সি পদে কর্মরত মোট ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশ মেনে মোট ৮৪২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তালিকায় প্রাথমিক ভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত অন্তত ১৩ জনের নাম রয়েছে। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন শুক্রবারও স্কুলে এসেছিলেন। ওই ১৩ জনের মধ্যে কাঁকসার অযোধ্যা হাইস্কুলে কর্মরত অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক জন নিজেকে তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে দাবি। বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি নিজেকে তৃণমূলের নানা নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবেও দাবি করতেন। তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ মানেননি।
অযোধ্যা হাইস্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-য় কাজে যোগ দেন বর্ধমানের অয়ন। স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের দাবি, স্কুল যোগ দিয়ে অয়ন তাঁর সঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি দেখাতেন। বিজেপির শিক্ষক-নেতা তথা ওই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক বিকাশ বিশ্বাসের অভিযোগ, “কিছু হলেই অয়ন নিজেকে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে উল্লেখ করতেন।” বিরোধীদের অভিযোগ, ফেসবুকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (পূর্ত) উত্তম সেনগুপ্তের সঙ্গে অয়নের ছবিও (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) রয়েছে। যদিও, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) সুশান্ত লাহার দাবি, স্কুলে অয়ন রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন না। পাশাপাশি, খোকনের বক্তব্য, “ওই নামে কাউকে চেনা তো দূর। নামই শুনিনি।” উত্তমের বক্তব্য, ‘‘অয়ন দীর্ঘদিন দল করেন। তবে কোথায় কী নাম এসেছে, জানি না। সেটা দল বুঝবে।” অয়নকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “বাইরে আছি। কিছু জানি না।”
এ দিকে, ওই তালিকায় বহুলা শশী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত দুর্গাপুরের এক জন, জামুড়িয়ার বাহাদুরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত ধসলের এক জনের নাম রয়েছে। দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি। দু’জনেই এ দিন স্কুলেও আসেননি। পাশাপাশি, এই তালিকায় আসানসোলের কাল্লা হরিপদ হাইস্কুল, কুলটি হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়, কুলটি গার্লস স্কুল, ঢাকেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়, উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ স্কুল, দোমোহানি কেলেজোড়া গার্লস স্কুল, কন্যাপুর হাইস্কুল, কাপিষ্টা হাইস্কুল, পাঁচগাছিয়া মনোহরবহাল স্কুলের দশ জনের নাম রয়েছে। তবে ঢাকেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন গঙ্গোপাধ্যায় ও কুলটি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায়েরা জানান, তালিকায় নাম থাকা তাঁদের স্কুলের দু’জন আগেই অন্যত্র বদলি হয়েছেন। বাকি স্কুলগুলিতে তালিকায় নাম থাকা কয়েক জন এ দিনও স্কুলে এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ওই স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা এখনও তালিকা হাতে পাননি। তা পেলে, নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থানেওয়া হবে।
পাশাপাশি, শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে চিত্তরঞ্জনের একটি স্কুলের ইংরেজির এক শিক্ষকের নাম রয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষককে স্কুলে আসতে নিষেধকরা হয়েছে।
এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপির শিক্ষক সেলের জেলা আহ্বায়ক বিকাশের বক্তব্য, “পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই তৃণমূল দুর্নীতির প্রবেশ ঘটিয়েছে। এই তালিকা তার প্রমাণ।” বাম প্রভাবিত নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষের বক্তব্য, “এটাই প্রত্যাশিত। শিক্ষাক্ষেত্রে ধারাবাহিক দুর্নীতি হয়েছে। দ্রুত স্বচ্ছ নিয়োগ হোক।” তবে ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আদালতের নির্দেশ নিয়ে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না। হয়তো বিভিন্ন স্কুলে সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত ফাঁকা পদেনিয়োগ হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy