দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে। ছবি: বিকাশ মশান
গরম বাড়ছে। বদলে যাচ্ছে আম-জনতার রুটিন। সকাল-সকাল কাজ সেরে ঘরে ঢুকে পড়া বা বিকেলে রোদের তেজ কমলে বাইরে বেরোনো— অনেকেই এমন পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু, অনেকেই আছেন, যাঁদের এ ভাবে রুটিন ঠিক করার সুযোগ নেই। চড়া রোদের মধ্যেই কাজ করে যেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের কর্মী বা ডাকঘরের পিওনদের।
মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ে ১২টা নাগাদ দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ডিভিসি মোড়ে গাড়ির সারি সামলাচ্ছিলেন এক পুলিশকর্মী। তাঁকে সাহায্য করছিলেন জনা কয়েক সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁরা জানালেন, জিরিয়ে নেওয়ার ফুরসত নেই তাঁদের। মাথায় হেলমেট, মুখে কাপড় বেঁধে ট্রাফিক সামলাচ্ছেন তাঁরা। বললেন, ‘‘কিছু তো করার নেই। মানুষের নিরাপত্তার বিষয়। কষ্ট হলেও গাফিলতির প্রশ্ন নেই।’’ তবে তাঁরা জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মী জানান, প্রচণ্ড গরমে ওই সময়ে সে ভাবে পথচারী বা ব্যক্তিগত যানবাহন থাকছে না রাস্তায়। তাই কর্তব্যরত ট্রাফিক কর্মীদের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই এই শিথিল ব্যবস্থা। এ দিন বিকেল ৪টে বাজতেই ডিভিসি মোড়ে হাজির হলেন সিভিক ভলান্টিয়ার কাঞ্চন সিংহ ও গোপাল বীরবংশী। তাঁরা জানান, দু’এক দিন ধরে ওআরএস দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। তবে হাত ঢাকার দস্তানা এখনও মেলেনি। তাঁদের কথায়, ‘‘রোদ থেকে বাঁচতে নিজেরাই বাড়ি থেকে নিয়ে দস্তানা নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ করে কাজ করছি। মাথায়-মুখে জল ঢেলে ঠান্ডা হচ্ছি।’’
একই পরিস্থিতি ডাকঘরের পিওনদের। বাড়ি-বাড়ি চিঠিপত্র বিলি করতে দুপুরে বেরোতেই হচ্ছে তাঁদের। ডাকঘর খোলে সকাল ১০টা নাগাদ। তার পরে চিঠিপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে বিলি করে ফিরতে দুপুর হয়েই যাচ্ছে। তাই রেহাই নেই তাপপ্রবাহের হাত থেকে। সকাল ১০টা বাজতে না বাজতেই তীব্র গরম হাওয়া বইতে শুরু করছে। সঙ্গে রোদের তেজ। ইস্পাতনগরীর এক ডাকঘরের পিওন সত্যব্রত দাস বলেন, ‘‘যতই তাড়াতাড়ি করি, ডাকঘরে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। সাইকেল চালিয়ে অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। রাস্তার ধারে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিই মাঝে মাঝে।’’
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানায় পালিতে (শিফ্ট) কাজ হয়। দুপুর ২টো নাগাদ শেষ হয় সকালের পালি। কারখানা থেকে শ্রমিকেরা বাড়ি ফেরেন। আর এই একই সময়ে নতুন কর্মীদের দুপুরের পালিতে কাজে যোগ দিতে হয়। রাস্তা তখন সুনসান। এ দিন ওই সময়ে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের সামনে লম্বা লাইন। ঠিকা শ্রমিক আনোয়ার শেখ, বিকাশ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে যা চলছে বলার নয়। কবে যে বৃষ্টি নামবে জানি না!’’ রাতুড়িয়া-অঙ্গদুপর শিল্পতালুকের বেসরকারি কারখানার কর্মী রাতুরিয়ার শ্রীকান্ত মণ্ডল বা তেঁতুলতলা কলোনির দীপক বারিকরা বলেন, ‘‘আর পেরে উঠছি না। এই গরমে কারখানায় গলিত লোহা নিয়ে কাজ-কারবার আমাদের। তার পরে বাইরে বেরিয়ে এই হাল। বৃষ্টি না হলে কী করে চলবে জানি না!’’
বৃষ্টির আর্তি সবার মুখে। ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অফিসও। চাতকের মতো এখন সে দিকেই নজর সকলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy