এখনও বন্ধ পড়ে রয়েছে বার্নপুরের ছোটদিঘারি উচ্চবিদ্যালয়। ছবি: পাপন চৌধুরী
ঢং-ঢং ঘণ্টা বাজছে! বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই শব্দ শেষ বার শোনা গিয়েছিল করোনা অতিমারি শুরুর আগে। এখন আর সেই ভয়াবহতা নেই। করোনা-আতঙ্ক কাটিয়ে স্কুলে স্কুলে ফিরছে পড়ুয়ারা। আগের মতোই গমগম করছে স্কুল চত্বর। ভেসে আসছে ঘণ্টার শব্দ। কিন্তু সেই কোলাহল বা ঘণ্টার শব্দ এখনও শোনা যাচ্ছে না বার্নপুরের নিউটাউন ছোটদিঘারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে। কারণ, করোনা অতিমারির সঙ্গে যুঝতে স্কুল বন্ধ করে ‘কোভিড জাম্বো’ হাসপাতাল তৈরি করা হয়। তবে এক দিনের জন্য তা চালুও হয়নি। এই অবস্থায় বাগ্দেবীর আরাধনার সকালে পুরনো এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন স্থানীয় বিধায়ক থেকে শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। স্থানীয় বাসিন্দারাও আবার শুনতে চাইছেন ক্লাস শেষের ঘণ্টা, পড়ুয়াদের কোলাহল।
দেশ জুড়ে করোনা অতিমারির ভয়াবহতা যখন তুঙ্গে উঠেছিল, তখন আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একটি বিশেষ কোভিড হাসপাতাল তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন ইস্কো কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ছোটদিঘারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে কোভিড জাম্বো হাসপাতালের জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। সরকারি নির্দেশে সে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায়, ওই স্কুলভবনেই প্রায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল বানানো হয়। ২০২১-এর ১৯ মে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ‘ভার্চুয়াল’ ব্যবস্থায় হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। কিন্তু ওই হাসপাতাল আর চালুই হয়নি। বর্তমানে করোনার সেই ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠেছে দেশ। শহরের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু ছোটোদিঘারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল আর খোলেনি।
১৯৬২-তে বার্নপুর ইস্কোর তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের শিক্ষর প্রসারে ‘দ্বিভাষিক’ এই স্কুলটি খোলা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন-সহ যাবতীয় খরচ ইস্কোর তরফেই বহণ করা হয়েছে। শেষ দিন পর্যন্ত স্কুলে প্রায় ১১০ জন পড়ুয়া ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরে, ওই পড়ুয়াদের ইস্কোর বার্নপুর বয়েজ় ও গার্লস স্কুলে স্থানান্তর করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অন্যত্র বদলি করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, নিউটাউন, ছোটদিঘারি-সহ আশপাশের প্রায় ১৭টি গ্রামের পড়ুয়াদের বহু দূরে পড়াশোনা করতে যেতে হয়। তাঁদের আবেদন, ফের এই স্কুল চালু করা হোক আগের মতোই। বার্নপুর একটি স্কুলের ছাত্র তথা ছোটোদিঘারি স্কুলের প্রাক্তনী দীনবন্ধু মিত্র আক্ষেপ, “পুরনো স্কুলের স্মৃতি এখনও ভেসে ওঠে। আমরা চাই সেই স্মৃতি ফের ফিরে আসুক।”
বাসিন্দাদের আবেদনকে সমর্থন করেছেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও। তিনি বলেন, “আমিও চাই এই স্কুল আবার খোলা হোক। কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছি।” অগ্নিমিত্রা জানান, তাঁর বিধানসভা এলাকায় সাধারণ পড়ুয়াদের জন্য স্কুলের অভাব আছে। ইস্কো তার সামাজিক তহবিলের টাকাতে ফের এই স্কুল খুলুক। স্কুল খোলার প্রশ্নে বিধায়কের সঙ্গে একমত হয়েছে বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ বলেন, “হাসপাতাল যখন হয়নি, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিই চালু করা উচিত।” এ নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েও স্কুল খোলার পক্ষে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তো কোনও কল্যাণমূলক কাজ করছে না। তবু এ ক্ষেত্রে স্কুল খোলা হলে ভাল।”
সত্যিই কি ফের খুলবে স্কুল? আজ, বৃহস্পতিবার বাগ্দেবীর আরাধনার সকালে আশায় বুক বেঁধেছেন স্কুলের এক প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা। বর্তমানে তিনি সংস্থার আধিকারিক পদে রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “সরস্বতী পুজোর দিন কত রকমের আয়োজন হত। পাত পেড়ে খিচুড়ি ভোগ খাওয়া, পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সে সব এখন অতীত হয়ে গিয়েছে!” তবে ইস্কোর জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, “এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy