Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
টিউশনে বিতর্ক/২

নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষকের কাছেই ভিড়

শিক্ষা দফতরের নির্দেশ উপেক্ষা করে গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুল শিক্ষকদের একাংশ, অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন তা বন্ধ করা যাচ্ছে না, কী বলছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ— খোঁজ নিল আনন্দবাজার। নানা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, শিক্ষার অধিকার আইনে এত দিন স্কুল শিক্ষকদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত টিউশন করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০০:১৩
Share: Save:

টিউশন করবেন না, এই মর্মে জমা পড়েছে অনেকের মুচলেকা। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা সে নিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন শিক্ষা দফতরে। কিন্তু তার পরেও স্কুল শিক্ষকদের অনেকেই টিউশন করা বন্ধ করেননি, অভিযোগ জেলার নানা এলাকাতেই।

নানা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, শিক্ষার অধিকার আইনে এত দিন স্কুল শিক্ষকদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত টিউশন করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ বার তা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। নানা স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানান, ওই আইনে স্কুলে পঠনপাঠনের সার্বিক যে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে, তার অন্যতম টিউশন প্রথা বন্ধ করা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থার গাফিলতিতেই টিউশন প্রথা চলে আসছে। আগে সে দিকটা ঠিক করতে হবে। তা না হলে শুধু নিয়মের কথা বলে পরিস্থিতি পাল্টাবে না।’’

অনেক প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার মতে, প্রথমে দেখতে হবে, পড়ুয়ারা কেন টিউশনে যাচ্ছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, শিক্ষক ও পড়ুয়ার অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩৫। অর্থাৎ, ৩৫ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বহু স্কুলে শিক্ষকেরা অবসর নেওয়ার পরে আর নতুন নিয়োগ হয়নি। ফলে, বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক ও পড়ুয়ার অনুপাত কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। যেমন, দুর্গাপুরের জেমুয়া ভাদাবালা বিদ্যাপীঠে নানা শ্রেণিতে শিক্ষক পিছু পড়ুয়া রয়েছে ১০৮ থেকে ১৩৬ জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জইনুল হক বলেন, ‘‘স্কুলে ঠিক ভাবে পঠনপাঠন হলে টিউশনের দরকার পড়ে না। কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলে স্কুলে উপযুক্ত পঠনপাঠন হবে কী ভাবে?’’

অনেক প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার দাবি, স্কুলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ, পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকলে পড়ুয়াদের টিউশনের প্রয়োজন পড়ার কথা নয়। তাঁদের মতে, সব স্কুল শিক্ষকের কাছে কিন্তু পড়ুয়ারা টিউশন নিতে যায় না। নির্দিষ্ট কয়েকজনের বাড়ির দরজাতেই ভিড় দেখা যায় বেশি। এর কারণ, পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা মনে করেন, ওই নির্দিষ্ট শিক্ষকেরাই পরীক্ষায় সফল হওয়ার টিউশন দিতে পারবেন।

স্কুল শিক্ষকদের একাংশের দাবি, বহু পড়ুয়া প্রয়োজন না থাকলেও অন্য সহপাঠীদের দেখে টিউশন নিতে যায়। নবম, দশম শ্রেণি থেকে প্রতি বিষয়ে আলাদা টিউশনের প্রবণতা তৈরি হয় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বড় অংশের মধ্যে। শিক্ষকেরা জানান, বহু দুঃস্থ পরিবার ছেলেমেয়ের স্কুলে বছরে ২৪০ টাকা ফি দিতেই হিমসিম খায়। সেখানে টিউশনের খরচ তাদের কাছে বড় বোঝা। অনেক অভিভাবক তার মধ্যেই চেষ্টা করেন টিউশন দিতে। আবার টিউশন ছাড়া পড়ে, ভাল নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাও দেখা যায় প্রতি বছরই।

দুর্গাপুরের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক সুশীল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আর্থিক কারণে আগে হয়তো কিছু শিক্ষককে টিউশন করতে হত। কিন্তু এখন বেতন অনেক বেড়েছে। শিক্ষকদের ক্লাসে ভাল ভাবে পড়ানো প্রয়োজন, যাতে পড়ুয়াদের টিউশনের দরকার না হয়।’’ তাঁর মতে, টিউশনই যাঁদের একমাত্র আয়ের উপায়, তাঁদের কথা ভেবেও শিক্ষকদের টিউশন করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

শিক্ষা দফতরের আশ্বাস, মুচলেকা দেওয়ার পরেও কোনও স্কুল শিক্ষক টিউশন করছেন, তা ধরা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

School Students Teachers Tuition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy