প্রাথমিকের গণ্ডী পেরোতে ওদের কারও বিয়ে হয়ে যায়। কেউ বা ওই বয়সেই রোজগারে হাত পাকায়। তাতে স্কুলছুটের সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, তেমনই বাড়ে শিশুশ্রমিক। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এলাকার হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উচ্চ প্রাথমিকস্তরে উন্নীত করা গেলে হয়তো এই প্রবণতা খানিকটা কমবে।
পুরসভাসূত্রে জানা গিয়েছে, গুসকরায় প্রায় সাড়ে চার হাজার হিন্দিভাষী মানুষ থাকেন। অথচ এলাকায় রয়েছে একটিমাত্র হিন্দি মাধ্যম প্রাথমিক স্কুল। গুসকরা পশ্চিম হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়প্রকাশ রায় জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পড়ুয়াদের গুসকরা থেকে অন্তত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান বা বুদবুদ যেতে হয়। স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, অনেক অভিভাবকই ছেলেমেয়েদের অত দূরে পাঠাতে চান না। ফলে অনেক পড়ুয়াই মাঝপথে পড়া বন্ধ করে দেয়। মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোয় হাতে গোনা কয়েক জন।
গুসকরা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরসভার ৩, ১০, ১১, ১২ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দার জীবিকাই দিনমজুরি, ভ্যান চালিয়ে অথবা জিনিসপত্র ফেরি করে দিন গুজরান করেন। এই পরিস্থিতিতে ঘরের ছেলেমেয়েদের দূরে পড়তে পাঠানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য অভিভাবকদের থাকে না। পড়াশোনা ছাড়িয়ে রোজগারে করলে বরং পরিবারে কিছুটা সুবিধা হবে, এই ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের নানা কাজে লাগিয়ে দেন।
সমস্যার কথা জানায় পড়ুয়ারাও। পঞ্চম শ্রেণির নেহা রায়, সাদিয়া খাতুন, সঞ্জনা পাসোয়ান, অংশু যাদব, গোলু যাদবরা বলে, ‘‘এখন পড়ছি ঠিকই। কিন্তু, কত দিন পড়তে পারব, জানি না।” দাদা, দিদিদের দেখেই এমন উপলব্ধি, তা-ওজানায় তারা।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৯৩ জন। সেখানে শিক্ষকও রয়েছেন চার জন। নতুন পরিকাঠামো তৈরির জায়গাও রয়েছে। সম্প্রতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিল থেকে পরিকাঠামো তৈরির জন্য দশ লাখ টাকা বরাদ্দও হয়েছে। পুরসভা থেকে উচ্চ প্রাথমিকের জন্য আবেদনও গিয়েছে প্রশাসনের কাছে। তবুও এখনও এগোয়নি কাজ।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আউশগ্রাম ১ চক্রের সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ বলেন, “বছর তিনেক ধরেই এটা নিয়ে চেষ্টা চলছে। এখনও কেন এটা হল না জানি না।’’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘উচ্চ প্রাথমিকের জন্য কোনও আবেদন মেলনি। তা পেলে প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’ বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারেরও আশ্বাস, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই এলাকায় একটি হিন্দি মাধ্যম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে। সংশ্লিষ্ট দফতরেআবেদন জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy