Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জলাধারে ‘খরা’, চাই বৃষ্টি

সেচ দফতরের কথায় চিন্তা বেড়েছে চাষিদের। কৃষি দফতরের কর্তাদেরও দাবি, যে পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে তাতে উপরের দিকে কিছু ব্লকের জমি ভিজলেও চাষ করা সম্ভব হবে না।

আমন চাষের তোড়জোড় কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

আমন চাষের তোড়জোড় কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০০:১২
Share: Save:

জল দেওয়ার কথা ছিল টানা ১২ দিন। কিন্তু মাইথন ও পাঞ্চেতে যে পরিমাণ জল রয়েছে, তাতে বড় জোর আর পাঁচ দিন জল ছাড়তে পারবে ডিভিসি। সোমবার সকাল থেকে সেচের জল ঢুকতে শুরু করেছে জেলায়। মঙ্গলবারই দফতরের কর্তাদের দাবি, জলাধার-এলাকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) টানা দু’দিন ভারী বৃষ্টি না হলে সেচের জন্যে জল দেওয়া সম্ভব হবে না।

সেচ দফতরের কথায় চিন্তা বেড়েছে চাষিদের। কৃষি দফতরের কর্তাদেরও দাবি, যে পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে তাতে উপরের দিকে কিছু ব্লকের জমি ভিজলেও চাষ করা সম্ভব হবে না। আর নিচু এলাকায় ওই জল যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। ফলে মাটি ভেজার পরে একটা নিম্নচাপ না হলে আশঙ্কা কাটবে না, মত তাঁদের।

সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, খরিফ মরসুমের জন্য প্রথম দফায় ২৫ জুলাই থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজের ‘লেফট ব্যাঙ্ক’ দিয়ে জল ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টির অভাবে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম জল থাকায় জল ছাড়া তিন দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক হয়, টানা ১২ দিন ধরে ১৫ হাজার কিউসেক করে জল ছাড়া হবে। কিন্তু রবিবার থেকে তিন দিনে মাত্র ৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সেচ দফতরের দাবি, মঙ্গলবার রাত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ দ্বিগুন করা হবে।

দফতরের দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র (বর্ধমান) ভাস্করসূর্য মণ্ডল বলেন, “মাইথন ও পাঞ্চেতে যতটা জল রয়েছে তাতে বড় জোর ৫-৬ দিন সেচের জন্য দেওয়া যেতে পারে। ঝাড়খণ্ড এলাকায় দু’দিনের ভারী বৃষ্টিপাত না হলে জলাধারগুলিতে ন্যূনতম জল রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেবে।’’ জুনে দুই বর্ধমানে ৫৭ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। জুলাইয়ে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৯৮ মিলিমিটার। তাতেও ৩২ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে।

গলসির চাষি তাপস হাজরা, বর্ধমান ১ ব্লকের সাইনাস হোসেনদের কথায়, “এখন মূল সেচখাল দিয়ে জল যাচ্ছে। মাঠর খালে জল আসতে আরও দু’এক দিন সময় লাগবে। প্রথম দফায় টানা ১০ দিন জল না পেলে চাষ করা যাবে কি না, সেটা চিন্তার বিষয়।’’

অন্য বছর এই সময় রায়না-খণ্ডঘোষ এলাকা জুড়ে সুগন্ধি ধান (‌গোবিন্দভোগ) রোয়া হয়ে যেত। এ বছর সেখানে ৩৭ শতাংশ ধান পুঁততে পেরেছেন চাষিরা। সহ কৃষি অধিকর্তা (রায়না ২) বলেন, “দক্ষিণ দামোদর এলাকার অধিকাংশ জমি সাবমার্সিবল নির্ভর। ভূগর্ভস্থ জলে চাষ করতে গেলে এক দিকে খরচ বাড়বে, তেমনি প্রয়োজনীয় জল পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। সে কারণে চাষিরা মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন।’’ বর্ধমানের গোবিন্দভোগ রাইস মিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন, “আকাশের অবস্থা দেখে চাষিরা পুরনো ধান বিক্রি করতে চাইছেন না। গত কয়েক দিনে খোলা বাজারে ধানের দাম বেড়েছে।’’

খরিফ মরসুমে এ জেলায় ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার জমিতে চাষ হয়। তার মধ্যে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমি সেচ এলাকাভুক্ত। সেচখালের মাধ্যমে জল পায় ২ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর জমি। গত বছর ২৯ জুলাই পর্যন্ত জেলায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। সেখানে সোমবার পর্যন্ত ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোয়া গিয়েছে। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “এখনও হতাশ হওয়ার সময় আসেনি। ধান রোয়ার জন্যে আরও ১৫ দিন সময় রয়েছে। টানা বৃষ্টি হলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Maithan Panchet Rain Irrigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE