রাজু ঝা খুনে এখনও অধরা হত্যাকারীরা। — ফাইল চিত্র।
রাজেশ ঝা ওরফে রাজু হত্যার পর ১১ দিন কেটে যাওয়ার পরেও খুনিদের পরিচয় নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। তাঁদের ভরসা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান শুনে আঁকানো হত্যাকারীদের স্কেচ। তবে ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা ভিন্রাজ্যের জেলে বন্দি উত্তরপ্রদেশের এক অপরাধীকে জেরা করেছেন। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তকারীদের কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেননি ওই অপরাধী। কী ভাবে খুনিরা এসেছিলেন, কী ভাবে তাঁরা খুন করেছিলেন, তার পর কী ভাবে, কোন পথে তাঁরা পালিয়েছিলেন— রাজেশ ঝা ওরফে রাজু হত্যাকাণ্ডে এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু বহু ‘রিসার্চ’ চালিয়েও, খুনিদের সন্ধান করতে পারেননি তাঁরা। তবে পুলিশ খুনের প্রত্যক্ষদর্শীকে দিয়ে হত্যাকারীদের যে স্কেচ আঁকানো হয়েছে, তা হয়ে উঠতে পারে এই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে, তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই চমকপ্রদ তথ্য হাতে আসছে সিটের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে যান সিটের সদস্যরা। তাঁরা সেখানে জেরা করেন উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার আমন সিংহকে। হাজারিবাগ জেলের আলাদা ঘরে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা ধরে আমনের থেকে নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তদন্তকারীরা। রাজু হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি আমন।
তদন্তকারীদের মতে, রাজুকে খুনের ছক কষা হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা চালিয়ে। রাজুকে অনুসরণ, তাঁকে খুনের জায়গা এবং পুলিশ ও সিসি ক্যামেরাকে কী ভাবে এড়ানো যাবে— প্রতিটি পদক্ষেপে হত্যাকারীদের নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ খুঁজে পেয়েছে সিট। যেমন, পুলিশকে ঘোল খাওয়াতে ‘কলিং অ্যাপ’-এর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতেন হত্যাকারীরা। যাতে কল রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে না আসে। যাতে গোপন করা যায় পরিচয়ও। গরমের সময় গাড়ির টায়ার ফেটে গিয়ে যাতে গোটা পরিকল্পনা বানচাল না হয়ে যায়, সে জন্য গাড়ির টায়ারে ভরা হয়েছিল নাইট্রোজেন গ্যাস। এর ফলে ঠান্ডা থাকে গাড়ির টায়ার। ফলে চাকা পাংচার হয়ে গিয়ে ঘটে না বিপত্তিও।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বার বার গাড়ি বদল করেছে হত্যাকারীরা। রাজুকে এলোপাথাড়ি গুলি করে খুনের পর আততায়ীরা একটি নীল ব্যালেনো গাড়িতে চড়ে শক্তিগড়ের দিকে কিছুটা যায়। এর পর সেখানে নীল গাড়িটি ফেলে রেখে তারা সাদা রঙের আর একটি গাড়ি চড়ে চম্পট দেয়। বিভিন্ন টোল প্লাজ়ার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ এমনটাই তথ্য পেয়েছে। আততায়ীদের ব্যবহৃত সেই নীল গাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ, মদের বোতল এবং একাধিক নম্বরপ্লেট পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পেরেছেন, সাদা রঙের ওই গাড়ির শেষ লোকেশন পাওয়া গিয়েছে বিহারের ভাগলপুরে। কেউ রাস্তায় আততায়ীদের জন্য অন্য গাড়ির বন্দোবস্ত করে রেখেছিল কি না, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
ভাড়াটে খুনিরা কোথা থেকে ওই নীল গাড়িতে চাপেন, কোন পথ ধরে তাঁরা শক্তিগড়ে পৌঁছন— তার অনুসন্ধানে নেমেছিল পুলিশ। তদন্তকারীরা চষে বেড়ান বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ পড়শি রাজ্য বিহার এবং ঝাড়খণ্ডও। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন বিহার, ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া হয়ে দুর্গাপুরে পৌঁছেছিল আততায়ীদের নীল গাড়িটি। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে আততায়ীরা তাঁদের ওই নীল গাড়িটির নম্বরপ্লেটও যে একাধিক বার বদল করেছিলেন, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত পুলিশ। তদন্তে এ-ও উঠে এসেছে, ঝাড়খণ্ডের একটি শোরুমে আততায়ীরা তাদের নীল চার চাকা গাড়ির টায়ারে নাইট্রোজেন গ্যাস ভরেন। মদও কেনেন ঝাড়খণ্ডের একটি মদের দোকান থেকে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নীল গাড়িটি গত ৩০ মার্চ দুপুর ২টোর কিছুটা পর বাঁকুড়ার ‘কালাপাথর’ টোল প্লাজ়ায় ১৩০ টাকা টোল মিটিয়ে পার হয়। ওই টোল প্লাজ়ার সিসিটিভির ফুটেজে নীল গাড়িতে ৪ জন সওয়ারির ছবিও ধরা পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও দুর্গাপুরের কাঁকসার বাঁশকোপা টোল প্লাজ়ার সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গিয়েছে ওই গাড়িটিকে। গত ৩১ মার্চ বিকালে কাঁকসার রাজবাঁধে রাজুর হোটেলের সামনে দেখা গিয়েছে নীল গাড়িটিকে। সেই ছবিও ধরা পড়েছে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত খুনিদের নিয়ে ‘শক্তপোক্ত’ কোনও ‘লিড’ আসেনি তদন্তকারীদের হাতে। এ নিয়ে কিছু বলতেও নারাজ পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন।
তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই হত্যারহস্য সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন প্রত্যক্ষদর্শী শক্তিগড়ের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবুজিয়া শেখ। পুলিশ ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতার মুখ থেকে গোটা ঘটনার বিবরণ শুনেছে ইতিমধ্যেই। আবুজিয়ার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী আততায়ীদের স্কেচও আঁকানো হয়েছে। সেই স্কেচই হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy