কবে বর্ষা আসবে বাংলায়, এখনও সেই বিষয় কোনও খবর জানায়নি হাওয়া অফিস। ছবি: শাটারস্টক
কয়েক দিন ধরেই চল্লিশ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই গরমে পুড়ে খাক গোটা শহর। চৈত্রমাস এখনও শেষ হয়নি, এরই মাঝে সকাল ১০ টাতেও রাস্তায় বেরোলে গায়ে ছ্যাঁকা লাগার মতো অবস্থা! এই দহনজ্বালা থেকে মুক্তি কী ভাবে ও কবে, তা এখনও অজানা। কবে বর্ষা আসবে বাংলায় এখনও সেই বিষয় কোনও খবর জানায়নি হাওয়া অফিস। কিন্তু পেশার তাগিদে বহু মানুষকে ভরদুপুরের গনগনে রোদেও বাইরে বেরোতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যা— হিট স্ট্রোক।
প্রবল রোদে বাইরে বেরোলে পথেঘাটে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে অজ্ঞানও হয়ে যান। কেউ আবার পুরোপুরি জ্ঞান না হারালেও, শরীর অসম্ভব দুর্বল মনে হওয়ায় উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পান না। শরীরে অস্থিরতা, কারও কারও ক্ষেত্রে বমি ভাব শুরু হয় বমি, খিঁচুনিও আসে। চিকিৎসকদের মতে, সে সময়ে তাঁর কী হয়েছে, কী করতে হবে— সে নিয়ে চর্চা এবং বিষয়টি লক্ষ করতে করতেই বেশ কিছুটা মূল্যবান সময় কেটে যায়। তার পর রোগীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু ঘটে যায়।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্তকে অবিলম্বে প্রাথমিক কী শুশ্রূষা দেওয়া প্রয়োজন?
চিকিৎসকদের মতে, সঠিক চিকিৎসা না পেলে ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ডেকে আনে। কিন্তু প্রাথমিক যে চিকিৎসাটুকু দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিলে কাউকে বাঁচানো সম্ভব, সেটা সকলের জানা প্রয়োজন। কারণ কিছু ক্ষেত্রে ভুল পদক্ষেপ বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাঁকে অনেক সময়েই জল খাওয়ানো হয়। চিকিৎসকদের মতে, এমনটা কখনও করা উচিত নয়। হিট স্ট্রোক হলে রোগী সজ্ঞানে থাকেন না অনেক সময়, ফলে শ্বাসনালিতে জল ঢুকে দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কিন্তু বেড়ে যায়।
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে থাকা থার্মোস্ট্যাট শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ভাবে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। গরম এবং ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা কতটা কমবে বা বাড়বে, তা নিয়ন্ত্রণ করে এই হাইপোথ্যালামাস। প্রচণ্ড ঠান্ডায় যেমন ত্বক কুঁচকে যায়, রক্তনালির সঙ্কোচন হয়, লোম খাড়া হয়ে যায়। শরীরের ভিতরের তাপ বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া হ্রাস পায়। আবার প্রচণ্ড গরমে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয়ে যায়, তাতে ঘাম বেরিয়ে শরীরের ভিতরের তাপকে বেরোতে সাহায্য করে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে প্রথমেই হাইপোথ্যালামাস বিকল হয়। দেহের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে ঘাম নিঃসরণও বন্ধ হয়ে যায়। আর তাতেই বাড়ে সমস্যা।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলি ভাল করে বুঝতে হবে। আক্রান্তের শরীর প্রচণ্ড তেতে থাকলেও কোনও ঘাম থাকবে না। সকলেই অজ্ঞান হবেন, এমন নয়। শরীরে মারাত্মক অস্থিরতা, খিঁচুনি হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই ঠান্ডা জল দিয়ে শরীরের বাইরের অংশকে দ্রুত শীতল করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এই সময় আরও একটি সমস্যা হল ‘হিট এগ্জ়শন’। এর প্রধান লক্ষণ তীব্র ঘাম। সেই সঙ্গে মাথা ঘুরতে থাকা, গা-বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, অসম্ভব ক্লান্তি। সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বগলে, কুঁচকিতে বরফ দিলে সুস্থ বোধ করেন রোগী। তবে এতে মৃত্যু হয় না।
কাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি?
শিশু ও বয়স্কদের হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া যাঁরা হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের মতো রোগে ভুগছেন, গরমের দিনে বাইরে ররোনোর সময় তাঁদের বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
হিট স্ট্রোক এড়াতে ঠিক কী করণীয়?
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাইরে বেরোলে রোদচশমা, ছাতা আর জল অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগতে দেবেন না। গা ঢাকা পোশাক পরবেন। হালকা সুতির পোশাক পরুন যাতে ঘাম হলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। চড়া রোদে খুব দরকার না পড়লে, বেরোবেন না। খুব বেশি বদ্ধ জায়গায় না থাকাই শ্রেয়। যদি দেখেন বেশি ঘামছেন, তা হলে ওআরএস জলে গুলে অল্প অল্প করে চুমুক দিতে থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy