Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
যুবকের দেহ উদ্ধারের পরে উঠল প্রশ্ন

জাল লাইসেন্স চক্র নিয়ে চিন্তায় পুলিশ

জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের চক্র সক্রিয় রয়েছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে, অভিযোগ উঠছে অনেক দিন ধরেই। রবিবার জাতীয় সড়কের ধারে ভিন রাজ্যের এক যুবকের দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর কাছে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে সন্দেহ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের চক্র সক্রিয় রয়েছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে, অভিযোগ উঠছে অনেক দিন ধরেই। রবিবার জাতীয় সড়কের ধারে ভিন রাজ্যের এক যুবকের দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর কাছে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে সন্দেহ। ওই ড্রাইভিং লাইসেন্সটিতে পানাগড়ের যে ঠিকানা রয়েছে, সেখানে খোঁজ নিয়ে ওই নামে কাউকে পায়নি পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে তার পরেই।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারবার রাজ্যের নানা জায়গাতেই সক্রিয়। শনিবারই উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয় আশিষ ঘোষ নামে এক যুবককে। উদ্ধার হয় একশোর বেশি জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স। পুলিশের দাবি, বাড়িতে কী ভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে এই জাল লাইসেন্সগুলি তৈরি করেছে, জেরায় আশিস তা জানিয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, সে একা নয়। তার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে। ২০১৪ সালে বারাসতের বরিশাল কলোনি থেকে সাহেব দাস নামে এক যুবককে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় কয়েকশো জাল লাইসেন্স।

রবিবার সকালে দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এবিএল জঙ্গলের ঝোপ থেকে অনুপ তিওয়ারি (৩০) নামে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ঠিকানা দেখে পুলিশের প্রথমে ধারণা হয়, মৃতের বাড়ি পানাগড় বাজারের ধর্মশালায়। কিন্তু সেখানে খোঁজ নিয়ে ওই পরিচয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এর পরে আধার কার্ড ও অন্য কাগজপত্র খতিয়ে দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, যুবকটির বাড়ি মহারাষ্ট্রে। তিনি পেশায় ট্রাক চালক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ট্রাক চালকদের অনেকে প্রয়োজনে কিছু দিন করে পানাগড়ের ধর্মশালায় থাকেন। ওই যুবকও সে ভাবে ধর্মশালায় থাকাকালীন ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করেছিলেন কি না, তা দুর্গাপুরের পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

গাড়ি চালকদের দাবি, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়। ফর্ম তোলা ও জমা দেওয়া, নির্দিষ্ট দিনে হাজির হয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে মেলে শিক্ষার্থীর শংসাপত্র। সেটির সাহায্যে ছ’মাস পর্যন্ত গাড়ি চালানো যায়। তার মাঝে এক দিন ট্রায়ালে ডাক পড়ে। তার পরেই মেলে পাকা লাইসেন্স। অভিযোগ, এ সব ঝামেলা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য রয়েছে দালাল চক্র। টাকা দিলে সশরীরে হাজির না হয়েও মিলে যায় শংসাপত্র। পুলিশের একাংশের দাবি, পরিবহণ দফতর থেকে এ ভাবে ‘জাল’ শংসাপত্র বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবহণ দফতরের তরফে অবশ্য এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স জাল করার অভিযোগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, কালির কার্টিজ, প্রিন্টার, কম্পিউটার, ফটোকপি ও ল্যামিনেশনের যন্ত্র ব্যবহার করে হুবহু আসলের মতো জাল ড্রাইভিং শংসাপত্র তৈরি করে দিতে পারে জালিয়াতেরা। কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার, নানা জায়গায় নানা দামে এই জাল লাইসেন্স বিক্রি হয়। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের ফলে শুধু যে রাজস্ব নষ্ট হয় তা নয়, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বা অপরাধমূলক কাজকর্ম করে ভুল ঠিকানার মাধ্যমে তদন্তে ধোঁকা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকে অনেকের।’’ পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে আশ্বাস ওই আধিকারিকের।

অন্য বিষয়গুলি:

Driving Licence Fake Driving Licence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE