Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Manteswar

দরজা এঁটে সপরিবার ‘আত্মঘাতী’ কনস্টেবল

ঘটনার কারণ নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশও। তবে পুলিশের দাবি, লটারির টিকিট কাটা, জুয়ায় আগ্রহ ছিল ওই কনস্টেবলের। বেতনের অর্ধেক চলে যেত ব্যাঙ্ক ঋণের মাসিক কিস্তি শোধ করতে।

সুদেবচন্দ্র দে ও রেখা দে।

সুদেবচন্দ্র দে ও রেখা দে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য  ও সুদিন মণ্ডল
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

বাড়িতে কালীপুজো হওয়ার কথা। প্রতিমার বরাত দেওয়া, দশকর্মার অর্ধেক বাজার সারা। সোমবার রাতে ছেলেকে নিয়ে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরে হাসিমুখেই সপরিবার দোতলার ঘরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন আরপিএফের কনস্টেবল। ভোরে তাঁর কিশোরী মেয়ের ফোন পেয়ে ওই ঘরে যান আত্মীয়েরা। খাটের উপরে পোড়া দেহ মেলে ওই কনস্টেবল সুদেবচন্দ্র দে (৩৯), তাঁর স্ত্রী রেখা দে (২৮) এবং ছেলে স্নেহাংশুর (৮)।

ওই ঘরের এক কোণে বসেছিল সুদেববাবুর বছর এগারোর মেয়ে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্ত্রী, ছেলে এবং নিজের গায়ে আগুন দেন ওই কনস্টেবল। খুনের মামলা রুজু করছে পুলিশ। তবে কী কারণে এই ঘটনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কিশোরীর তেমন চোট না লাগলেও মানসিক আঘাত এতটাই, যে কথা বলার অবস্থায় নেই সে।

পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাঘাসন গ্রামের দে পরিবারের ছোট ছেলে সুদেববাবু। কাটোয়া স্টেশনে কর্মরত তিনি। বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করতেন সেখানে। স্ত্রী দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন বৃদ্ধা শাশুড়ি অন্নপূর্ণাদেবীর সঙ্গে। বাড়ির বড় ছেলে বাসুদেব দে কর্মসূত্র সপরিবার কাটোয়ায় থাকেন। সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা। বাসুদেববাবু বলেন, ‘‘ভাইয়ের সঙ্গে পুজো নিয়ে আলোচনা হল। ও ছেলেকে নিয়ে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফেরার পরেও কথা হয়। তার পরে সবাই শুতে চলে যাই। মা আর আমরা নীচতলায় আর ভাই দোতলায় ছিল। মাঝরাতে এই কাণ্ড!’’

ওই পাড়াতেই থাকেন প্রতীক দে। সুদেববাবুদের আত্মীয় তিনি। তাঁর দাবি, সুদেববাবুর মেয়ে ফোন করে তাঁকে। প্রতীকবাবু বলেন, ‘‘সবাই ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোন ওই কিশোরী। ও বলে ‘কাকু মা-বাবা-ভাই পুড়ে মারা গিয়েছে। তুমি আমাকে বাঁচাও’। ছুটে বেরিয়ে ও বাড়ি যাই।’’ জানা গিয়েছে, ভোর সওয়া ৩টে নাগাদ তিনি এসে ডেকে তোলেন বাসুদেববাবুদের। দোতলায় গিয়ে তাঁরা দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কিশোরীর গলা পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের দাবি, দরজা বন্ধ করে আলমারি রেখে দেওয়া হয়েছিল সামনে। কোনও রকমে ফাঁক করে দরজার একটা পাল্লা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। অন্ধকার, ধোঁয়া ভরা ঘরে খাটে পাশাপাশি পড়েছিল বাকি তিন জনের দেহ।

পুলিশ এসে চার জনকেই মন্তেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে কারও সঙ্গেই কথা বলতে চাইছে না সে।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস, এসডিপিও (কালনা) শান্তুনু চৌধুরী। ঘরটি সিল করে দেওয়া হয়। ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন কাটোয়ার আরপিএফের ইনস্পেক্টর বিবেক সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে কাটোয়ায় কাজ করছেন সুদেব। আমাদের ধারণা, ব্যক্তিগত কোনও কারণ থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে।’’

ঘটনার কারণ নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশও। তবে পুলিশের দাবি, লটারির টিকিট কাটা, জুয়ায় আগ্রহ ছিল ওই কনস্টেবলের। বেতনের অর্ধেক চলে যেত ব্যাঙ্ক ঋণের মাসিক কিস্তি শোধ করতে। তবে স্ত্রী বা বাড়ির অন্যদের সঙ্গে কোনও গোলমালের কথা জানা যায়নি। বড় মেয়ে বেঁচে গেল কী ভাবে, অজানা তা-ও।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘বহু প্রশ্ন রয়েছে। মেয়েটি সুস্থ হলে আরও কিছু তথ্য মিলতে পারে। তদন্ত চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Police constable Suicide Manteswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy