এক-সঙ্গে: দাদার সঙ্গে ফের দেখা ভাইয়ের (মাঝে), রয়েছেন শিক্ষক শৌভিক (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
কেউ তাঁকে রাখি বেঁধে দিচ্ছেন। কেউ বা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নতুন পোশাক। সামনে এক জনকে দেখে হঠাৎই তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘বড়দা’! চার বছর পরে দেখা হল দাদা-ভাইয়ের। সোমবার, রাখির দিন বর্ধমানের হলদি মোড়ে বড়দার হাত ধরেই ‘নিখোঁজ’ ভাই ফিরে গেলেন পরিবারের কাছে। সেটা সম্ভব হয়েছে, শৌভিক ভট্টাচার্য নামে এক যুবকের উদ্যোগে।
সোমবার সকালে হলদি-দে’পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। তিন বছর ধরে গ্রামে আশ্রয় পাওয়া, বছর বিয়াল্লিশের কমলকুমার মণ্ডল আজ বাড়ি ফিরবেন যে!
ভাইকে নিতে এসে তাঁর দাদা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বজবজের বাসিন্দা সুশীল মণ্ডল জানান, বছর চারেক আগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন তাঁরা দুই ভাই। তার পরে থেকেই খোঁজ মেলেনি কমলবাবুর। বছর তিনেক আগে বর্ধমানের এই গ্রামে হঠাৎ এক দিন দেখা মেলে কমলবাবুর। রাস্তার ধারে, কারও বাড়ির দরজায়, কখনও বা চায়ের দোকানে রাত কাটত কমলবাবুর। পরে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন বাসিন্দারাই। খাবার, কমলবাবুর নিরাপত্তা, সবই জুগিয়েছেন বাসিন্দারা। এ দিন গ্রামবাসী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মঞ্জু দত্ত, নিবেদিতা চৌধুরীরা বলছিলেন, “উনি আমাদের ঘরের লোক হয়ে উঠেছিলেন। ওঁর বাড়ির ঠিকানা জানার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি।’’
সম্প্রতি ওই গ্রামে গৃহশিক্ষকতা করতে যান ভাতারের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শৌভিক। স্থানীয় পিলখুড়ি গ্রামের বাসিন্দা শৌভিক শোনেন কমলবাবুর কথা। ঠিক করেন, যে ভাবে হোক তাঁকে ঘরে পৌঁছে দেবেন। কমলবাবুর সঙ্গে আলাপ জমিয়ে জানতে পারেন ঠিকানা। এর পরে পরিচিত কয়েক জনের হোয়্যাটস-অ্যাপে কমলবাবুর ছবি পাঠান শৌভিক। বিভিন্ন সূত্র থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলবাবু ঠিক ঠিকানাই বলেছেন।
তার পরেই এই মিলন উৎসব। শৌভিকের কথায়, ‘‘রাখির দিনে এর থেকে ভাল বন্ধন আর কিছুই হয় না।’’ ভাইকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে সুশীলবাবু বলেন, ‘‘শৌভিকবাবু আর এই গ্রামের প্রতি আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ।”
শৌভিক অবশ্য এর আগেও দু’জনকে ‘ঠিকানা’ খুঁজে দিয়েছেন। বছর দু’য়েক আগে সরস্বতী পুজোর দিন, মঙ্গলকোটের গোবর্ধনপুরের এক বাসিন্দাকে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র বলতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল তাঁর। তাঁরই চেষ্টায় ও পুলিশের সহযোগিতায় মানসিক অবসাদগ্রস্ত ওই ব্যক্তি বাড়ি ফেরেন। মাস খানেক আগে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হিন্দিভাষী এক মহিলাকে হোমে রাখার ব্যবস্থা করেন শৌভিক।
শৌভিকের নিজের কথায়, “পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক দিনের জন্য আমার কাকা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই যন্ত্রণা থেকেই ভবঘুরেদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।’’ পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল এই শিক্ষকের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy