গ্রামবাসীকে সতর্ক করতে মাইকে প্রচার। কালাঝরিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
বছর চারেক আগে ‘নির্মল জেলা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল সাবেক বর্ধমানকে। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরে মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়ে দাঁতালের হানায় বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনাকে তুলে ধরে প্রশাসনকে বিঁধছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি, ওই গ্রামের বহু বাড়িতে কেন শৌচাগার নেই, তা নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুরসভার কর্তাদের মধ্যে।
মঙ্গলবার দাঁতাল থেঁতলে দিয়েছে কালাঝরিয়ার কুমোরপাড়ার বাসিন্দা অলকা বাউড়িকে (৬৫)। এই ঘটনার পরে পুর-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অলকাদেবীর মেয়ে ঝুকুদেবী। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার নেই বলেই মা’কে বাড়ির বাইরে যেতে হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলরকে বহু বার শৌচাগার বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ গ্রামবাসী জানান, অলকাদেবীর বাড়ি-সহ গ্রামের শতাধিক বাড়িতেই শৌচাগার নেই। এই পরিস্থিতিতে শৌচকর্মের জন্য দূরের জঙ্গল লাগোয়া মাঠে যেতে হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি। তাঁরও ক্ষোভ, ‘‘পুরসভা শৌচাগার বানানোর টাকা দেবে বলেও দেয়নি।’’ দাঁতালের হানার পরে শৌচকর্ম করতেও দল বেঁধে যেতে হবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন বাউড়ি।
যে এলাকায় এই ঘটনা, সেটি আসানসোল পুরসভার ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর ধর্মদাস মাজির কথায়, ‘‘শতাধিক বাড়িতে শৌচাগার নেই। শৌচাগার না থাকা বাসিন্দাদের নামের তালিকা পুরসভার কাছে জমা করা হয়েছে। শৌচাগার তৈরির কাজ পুরসভার।’’ যদিও পুরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্তার দাবি, প্রত্যেক কাউন্সিলরকে শৌচাগার না থাকা বাসিন্দাদের নামের তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছিল। ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে, তালিকা জমা দেন। তাই কাজ আটকে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পুরসভা এলাকায় কতগুলি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তার মধ্যে কতগুলি বাকি আছে, উঠেছে এ সব প্রশ্নও। এই পরিসংখ্যান রাখার দায়িত্বে থাকা পুরসভার আধিকারিক আবু জাফর খান স্বীকার করেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে ঠিক মতো তথ্য নেই।’’ যদিও পুরসভার কমিশনার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানান, বছরখানেক আগে কম-বেশি ৩০ হাজার শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। তার মধ্যে কুড়ি হাজারের মতো শৌচাগার তৈরি হলেও বাকিগুলি এখনও হয়নি।
কিন্তু কেন শৌচাগার তৈরি করা যায়নি, উঠেছে সে প্রশ্নও। জেলা প্রশাসনের দাবি, অনেকেই পর্যাপ্ত জায়গা দিতে পারেননি। কিছু ক্ষেত্রে শরিকি বিবাদ থাকায় উপভোক্তা প্রথমে জায়গা দিলেও, পরে শৌচাগার নির্মাণ করতে পারেননি। তবে এ সব ক্ষেত্রে গণ শৌচাগার বানানোর পরিকল্পনা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮২টি গণ শৌচাগার বানানো হয়েছে। খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘‘আমরা ফের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করছি। যেখানে শৌচাগার নেই, সেখানে খুব দ্রুত তা তৈরি করা হবে।’’
তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করছে উন্নয়ন নিয়ে পুরসভার দাবি আসলে ফাঁকা বুলি।’’ বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান সফল করতে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠালেও মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ যদিও আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘বিরোধীদের বলার মতো মুখ নেই। এর আগে বামপন্থীরা শহরে একটিও শৌচাগার বানাতে পারেননি। আমরা ৯৮ শতাংশ শৌচাগার তৈরি করে ফেলেছি। বাকিগুলিও দ্রুত তৈরি করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy