Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

দেওয়াল ভেঙে মৃত বৃদ্ধ, ক্ষতিগ্রস্ত বহু

ঝড়-বৃষ্টি শুরুর পর থেকে ৯৮০ জন মানুষকে বিভিন্ন জায়গাতে সরাতে হয়েছে।

বর্ধমান শহরের ছোটনীলপুরে উপড়ে গিয়েছে পুরনো গাছ। বৃহস্পতিবার সকালে। —নিজস্ব চিত্র

বর্ধমান শহরের ছোটনীলপুরে উপড়ে গিয়েছে পুরনো গাছ। বৃহস্পতিবার সকালে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

আমপানে বিপর্যস্ত হল পূর্ব বর্ধমান। ঘুর্ণিঝড়ের দাপটে বুধবার বিকেল থেকে ভেঙে পড়ে একের পরে এক বিদ্যুতের ও টেলিফোনের খুঁটি, বহু গাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর বাড়ি। গাছ পড়ে ক্ষতি হয়েছে গাড়ির। মঙ্গলকোটে দেওয়াল চাপা পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। বুধবার রাতে মেমারি শহরে ত্রাণ শিবির খুলতে হয়। বৃহস্পতিবারও স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফের আকাশে মেঘ দেখে আতঙ্কিত হয়েছেন বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসনের দাবি, ঘূর্ণিঝড় আমপানের জন্য জেলায় প্রায় ১,২৩,৪০০ জন মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৬টি গবাদি পশুর।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ভাতারে। জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৭৫-৮০ কিলোমিটার। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘ঝড়ের স্থায়িত্ব অনেকক্ষণ ছিল। ফলে, ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে বা নষ্ট হয়েছে, তাঁদের প্রাথমিক ভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সে ব্যবস্থা করা হবে।’’

বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, জেলায় সম্পূর্ণ কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে ৪৯৫টি, আংশিক ভেঙেছে ৪,৩২০টি। ঝড়-বৃষ্টি শুরুর পর থেকে ৯৮০ জন মানুষকে বিভিন্ন জায়গাতে সরাতে হয়েছে। মেমারি শহরের ব্রাহ্মণপাড়া প্রাথমিক স্কুলে ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছিল। তবে এ দিন দুপুরে সবাই বাড়ি চলে গিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্ধমান শহরে প্রায় ১৫টি গাছ ও ৭০টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ-বিপর্যয় হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরেও অনেক জায়গা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ছিল। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক আধিকারিক দাবি করেন, ‘‘কোথাও গাছ পড়ে তার ছিঁড়েছে, কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি ঝুলছে। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। সে জন্য অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।’’ বর্ধমান পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমিত গুহ জানান, শহরের ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১৬, ১৭, ১৯ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু বাড়ি ও গাছ ভেঙেছে। সদরঘাট এলাকায় একটি পাম্প হাউস বিকল হয়ে পড়েছিল। তা ঠিক করা হয়েছে।

কালনা শহরের জাপট এলাকায় প্রায় ৬০ বছরের একটি পুরনো গাছ বিদ্যুতের তারের উপরে পড়ে। তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে যায়। তা ঠিক করতে দুপুর গড়িয়ে যায়। এসটিকেকে রোডেও বিদ্যুতের তার পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিভাগীয় বাস্তুকার (কালনা) কৌশিক মণ্ডল জানান, ৫৮টি ১১ কেভি লাইনের মধ্যে সব ক’টিতেই গাছের ডাল, বিদ্যুতের খুঁটি পড়ায় বিকল হয়ে গিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ছ’টি চালু করা গিয়েছে। সব ক’টি চালু করতে আজ, শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই দুর্যোগে মহকুমায় প্রায় দু’শো বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে।

কাটোয়া মহকুমা এলাকায় এক জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বলে মহকুমাশাসক প্রশান্তরাজ শুক্ল জানান। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলকোটের যজ্ঞেশ্বরডিহি এলাকায় বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে গুরুতর জখম হন রাধারমন ঘোষ (৭২)। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তার ছিঁড়ে পড়ায় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল কাটোয়ায়। মহকুমায় ১২২টি কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে, ৯১১টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের দাবি, ঝড়ের দাপটে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

টাওয়ারে ক্ষতি হওয়ায় ভেঙে পড়েছে টেলিফোন ব্যবস্থাও। বারবার চেষ্টা করেও ফোনে প্রায় সময়ই কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। ইন্টারনেট পরিষেবাও বেহাল। ফলে, জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত। বর্ধমানের যুবক সফিকুল শেখ, কালনার নির্মল মুখোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘ফোনে ঠিকমতো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ইন্টারনেট মিললেও তার গতি খুব কম। তাই অ্যাপ-নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কলকাতার সঙ্গে তো কোনও ভাবেই যোগযোগ করা যাচ্ছে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy