Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ডাক্তার নেই, মেলে না নিশ্চয়যানও

গোটা মহকুমায় পাঁচটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তেরোটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি গ্রামীণ হাসপাতাল। কেমন চিকিৎসা হয় কাটোয়ার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে? পরিকাঠামোর কী হাল? চিকিৎসক-কর্মীর সংখ্যাই বা কেমন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার পাঁচটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪০ জন চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া কম রয়েছে ৪০ জন নার্স, এক জন ফার্মাসিস্ট ও ৩৭ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।

সিঙ্গত হাসপাতালে রবিবার ডাক্তার না থাকার বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র

সিঙ্গত হাসপাতালে রবিবার ডাক্তার না থাকার বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
Share: Save:

জরুরি বিভাগের দরজায় সাঁটানো রয়েছে বিজ্ঞপ্তিটা। রবিবার কোনও চিকিৎসক পাওয়া যাবে না, পরিষ্কার লেখা রয়েছে তাতে। মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের মতোই চিকিৎসকের সঙ্কটে ভুগছে কাটোয়া মহকুমার ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। অভাব রয়েছে নার্স এবং কর্মীরও।

মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার পাঁচটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪০ জন চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া কম রয়েছে ৪০ জন নার্স, এক জন ফার্মাসিস্ট ও ৩৭ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এই ঘাটতি গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবায় প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ২০ নম্বর ঘরের দরজায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, চিকিৎসকের অভাব থাকায় রবিবার কোনও চিকিৎসক থাকবেন না। নার্সেরা শুধু জরুরি পরিষেবা দেবেন।

ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা মাথরুনের চূড়ামনি লাহা, হুমায়ূন শেখরা বলেন, ‘‘রবিবার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেই বিপদ। ২০ কিলোমিটার উজিয়ে কাটোয়া হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। নার্স বা কখনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা ওষুধ দেন।’’ তাঁদের অভিযোগ, শনিবার অর্ধেক সময় রোগী দেখা হয়। বেশিরভাগ দিন দুপুর ২টোর পরে রোগী এলে কাটোয়ায় স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবি, এই হাসপাতালের মূল সমস্যা ‘রেফার’। মাত্র দু’জন চিকিৎসকে কাজ চলে ২৫ শয্যার এই হাসপাতালে। রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করা হয় বলে অভিযোগ।

পাণ্ডগ্রাম, শিবলুন ও সীতাহাটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসকই নেই। স্থানীয় বাসিন্দা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, ময়না দাসদের অভিযোগ, ‘‘ফার্মাসিস্টই রোগী দেখেন, ওষুধ দেন। রাতে তা-ও মেলে না।’’ সিঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও বিকেল ৫টার পরে পরিষেবা পাওয়া যায় না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে বা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কাটোয়া ছুটতে হয়, জানান তৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়, রাধিকা ঘোষেরা।

মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক জন চিকিৎসককে তিন মাস ধরে গলসির পুরষায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পরিষেবা দিতে পাঠানো হচ্ছে। চিকিৎসকের অভাব থাকায় এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে জেলার অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা দিতে হয়। ফলে, চিকিৎসকের পক্ষে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশী রোগী দেখা সম্ভব হয় না। নিগনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক অসুস্থ থাকায় নিয়মিত রোগী দেখতে পারেন না বলে দাবি বাসিন্দাদের।

মঙ্গলকোট ব্লকে ১৫টি পঞ্চায়েতে আবার অভিযোগ রয়েছে নিশ্চয়যানের পরিষেবা নিয়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনেক সময়েই নিশ্চয়যান না পেয়ে চড়া ভাড়ায় গাড়িতে করে মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে হয় প্রসূতিদের। মঙ্গলকোটের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণয় ঘোষ বলেন, ‘‘এখন ছ’টি নিশ্চয়যান রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শীঘ্র আরও দু’টি পাব।’’ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত ১০-১১টি প্রসব হওয়ায় আরও নিশ্চয়যানের প্রয়োজন রয়েছে বলে তাঁর মত। ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রতন শাসমল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অবস্থা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Doctor Hearse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy