Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Muslin Merchant

বাজার মিলছে কাঠখড় পুড়িয়ে, দাবি মসলিন শিল্পীদের

২০১৯-এ ‘কালনা উইভার্স অ্যান্ড আর্টিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ রাজ্য খাদি ইন্ডাস্টি বোর্ডের নজরে আনে গ্রামটিকে।

মসলিনের শাড়ি তৈরি।

মসলিনের শাড়ি তৈরি। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৩
Share: Save:

তাঁদের হাতে তৈরি মসলিনের শাড়ি আনায়াসে গলে যায় আংটির মধ্যে দিয়ে। রাখা যায় দেশলাইয়ের বাক্সে অথবা নারকেলের মালায়। শুধু শাড়ি নয়, কালনার অখ্যাত গ্রাম কাদিপাড়ার শিল্পীদের তৈরি মসলিনের পাগড়ি, শাড়ি, ধুতি, লুঙি পৌঁছেছে দেশের বিখ্যাত অনেক মানুষের কাছে। মন কেড়েছে বিদেশিদেরও। শিল্পীদের দাবি, তাঁরা যে মানের পণ্য তৈরি করেন, তার বাজার পেতে কাঠখড় পোড়াতে হয়। শিল্প এবং শিল্পী বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ।

শহর কালনা থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে বাস মসলিনের শাড়ি-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির দক্ষ কয়েক জন কারিগরের। যাঁরা দীর্ঘসময় ধরে ধৈর্য ধরে হস্তচালিত তাঁতে বুনতে পারেন মিহি সুতোর শাড়ি। শিল্পী সুকুমার দাসের হাতে তৈরি মসলিনের পাগড়ি উঠেছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মাথায়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, সরোদবাদক আমজাদ আলি খান, তাঁদের তৈরি ধুতি পরেছেন। কালনার শিল্পীর তৈরি লুঙি পড়েন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও মাঝেমধ্যে যায় এ গ্রামে তৈরি শাড়ি।

ছোট্ট এই গ্রামের বহু মহিলা তুলো থেকে ধাপে ধাপে ১৫০-৫০০ কাউন্ট সুতো তৈরি করেন। এক একটি মসলিন সুতোর শাড়ির লাচি হয় হাজার মিটারের। ৫০০ কাউন্টের এক লাচি সুতোর ওজন মাত্র ২ গ্রাম। ১০০ কাউন্ট সুতোর ওজন ১০ গ্রাম। শিল্পীদের দাবি, ৫৫-৬০ হাজার টাকা মূল্যের অত্যন্ত কম ওজনের মিহি শাড়ি বুনতে দক্ষতার পাশাপাশি লাগে ধৈর্য। এই ধরনের শাড়ি অর্ধেক ইঞ্চি বুনতে গোটা একটা দিন চলে যায়।

২০১৯-এ ‘কালনা উইভার্স অ্যান্ড আর্টিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ রাজ্য খাদি ইন্ডাস্টি বোর্ডের নজরে আনে গ্রামটিকে। শিল্পীদের সহায়তার জন্য খাদিবোর্ডের তরফে দেওয়া হয় চরকা-সহ নানা সরাঞ্জাম। খাদির বিপণন কেন্দ্রগুলিতে এখানকার শিল্পীদের তৈরি পণ্য বিক্রি হয়। এর জন্য খাদিবোর্ডের তরফে নকশা দেওয়া হয়। ৫০০ কাউন্টের তৈরি সুতো বিদেশিদের জন্য রাখা হয় বিশ্ববাংলা বিপণিতে। শিল্পীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ২-২০ হাজার টাকা মূল্যের শাড়ি বেশি বোনেন। তাঁদের তৈরি শাড়িকে সম্প্রতি শংসাপত্র দিয়েছে মুম্বইয়ের খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি কমিশন। বিভিন্ন সময়ে বিদেশি প্রতিনিধিরা গ্রামে
এসে দেখে গিয়েছেন শিল্পকর্ম। আমেরিকা, ইংল্যান্ডের মতো দেশে পৌঁছেছে এই গ্রামের শাড়ি-সহ অন্য পণ্য। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার থেকেও স্টোল, স্কার্ফ, চুড়িদারের ছিটের বরাত মিলছে।

শিল্পীদের দাবি, রাজ্যের খাদি বোর্ডের বরাত ইদানীং কমছে। এ বার তারা মাত্র ৫০ হাজার টাকা পণ্য কিনেছে। শিল্প এবং শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন আরও সরকারি উদ্যোগ। সবিতা ঢক, রমা মালিক, করুণা বিষয়ী, নমিতা দাস, পুতুল দাসদের বক্তব্য, ‘‘সারা বছর ভাল পরিমাণ বরাত না থাকায় সব সময় কাজ মেলে না। শিল্পকে বাঁচাতে গেলে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন হয়।’’ শিল্পী সুকুমার বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে অলঙ্কার রাখার ব্যাগ-সহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয়ে লাগে এমন জিনিসপত্রের বরাত মিললে কাজ বাড়ে। মসলিনের শাড়ি বিক্রির বাড়াতে পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে সরকারি উদ্যোগে স্টল খুলতে হবে।’’

ওই সোসাইটির সম্পাদক তপন মোদকের বক্তব্য, ‘‘মসলিনের শাড়ি-সহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য সরকারি ব্যবস্থার আধুনিকরণ প্রয়োজন। অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে।’’ কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল জানিয়েছেন, কাদিপাড়া গ্রামে শিল্পীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হবে। কালনা শহরে একটি মসলিনের শাড়ির বিক্রয় কেন্দ্র খোলার চেষ্টা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna Muslin Cloth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy