নীলাঞ্জনা শর্মা। ছবি: সংগৃহীত।
টালিগঞ্জের এনটিওয়ান স্টুডিয়ো ফ্লোরে তখন সকলেই আবেগপ্রবণ। ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ ধারাবাহিকের শেষ দিনের শুটিং। আড়াই বছরে ইউনিট একটা পরিবারের মতো হয়ে উঠেছে। তাই প্রযোজক নীলাঞ্জনা শর্মার সঙ্গে ফ্লোরে উপস্থিত তাঁর দুই কন্যাও। গত বছর একাধিক কঠিন মহূর্তের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছেন নীলাঞ্জনা। মায়ের প্রয়াণ, দাম্পত্য জীবন নিয়ে চর্চা— সবই এসেছিল একসঙ্গে। এ বার ব্যস্ততার ফাঁকেও আনন্দবাজার অনলাইনকে আলাদা করে সময় দিলেন তিনি। তবে সাক্ষাৎকার শুরুর আগেই অনুরোধ এল, কোনও ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যাবে না।
প্রশ্ন: ৭৬৭টি পর্ব! একটা দীর্ঘ সফর শেষ হল। শেষ দিনের শুটিংয়ের পরিবেশ কী রকম ছিল?
নীলাঞ্জনা: প্রত্যেকেরই মনখারাপ। গত কয়েক দিন ধরেই শুটিং করতে গিয়ে কলাকুশলীদের অনেকের চোখেই জল দেখেছি। শেষ দিনে আমাদের দুপুর ২টোয় শুটিং গুটিয়ে ফেলার কথা ছিল। কিন্তু ৫টা বেজে গেল। কারণ অনেকেই বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি কাঁদেননি?
নীলাঞ্জনা: না। নিজের মনকে শক্ত করেছিলাম। কারণ জানতাম, আমি কাঁদলে তখন সকলেই কাঁদতে শুরু করবেন।
প্রশ্ন: আড়াই বছরের সফর। মনের দিক থেকে আপনি তো বেশ শক্ত।
নীলাঞ্জনা: অবশ্যই। কারণ জীবন সেটা শিখিয়ে দেয়। প্রত্যেক সফরের শেষে নতুন সফরের ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে। সেই সুখস্মৃতিগুলিকে সম্বল করে এখন সামনে তাকানোর সময়।
প্রশ্ন: শেষ দিনে কোন ভাবনাগুলি আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে?
নীলাঞ্জনা: এটাই যে ‘হরগৌরী…’ শুধুই দু’হাত ভরে আমাদের দিয়েছে। ভাল সম্পর্ক এবং টিআরপি উপহার দিয়েছে।
প্রশ্ন: একজন প্রযোজক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকগুলি বছর কাটিয়ে ফেললেন। কী কী শিখলেন?
নীলাঞ্জনা: এটাই শিখেছি যে একা কিছু করা যায় না। দলের সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হয়। কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির কারণে কোনও শো হিট করে না, আবার ফ্লপও হয় না।
প্রশ্ন: স্টারের সঙ্গে কি আবার নতুন কোনও ধারাবাহিকের পরিকল্পনা রয়েছে?
নীলাঞ্জনা: ওদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ সম্পর্ক। মাঝে ছ’বছরের বিরতির পর আবার স্টারের সঙ্গেই কাজ শুরু করি। আশা করছি খুব শীঘ্র আবার নতুন কিছু শুরু করতে পারব।
প্রশ্ন: সারা এবং জ়ারা কি আজকেই প্রথম ধারাবাহিকের ফ্লোরে এল?
নীলাঞ্জনা: ওরা কিন্তু আগেও অনেক বার ফ্লোরে এসেছে। গত বছর ইউনিটের তরফে ফ্লোরেই জ়ারার জন্মদিন উদ্যাপন হয়েছিল। সেটা আমার মনকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: মেয়েরা যে আপনাকে নিয়ে গর্বিত, সেটা কিন্তু ওদের দেখলেই বোঝা যায়...
নীলাঞ্জনা: বয়স আন্দাজে ওরা খুবই পরিণত। আমার বাবা সব সময় বলেন, ওদের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। যাতে ওরা মনের সব কথা আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। আগে মা-ও (অঞ্জনা ভৌমিক) সেটাই বলতেন। আবার আমি তো একজন মা। তাই প্রয়োজনে সন্তানের সঙ্গে সেই দেওয়ালটাও বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন: মেয়েদের সঙ্গে সব কিছু ভাগ করে নিতে পারেন?
নীলাঞ্জনা: আমার জীবনটা একটা খোলা বইয়ের মতো। ওদের জীবনটাও সে রকম। তাই কোনও সমস্যা হয় না। সত্য যতই কঠিন হোক না কেন, সেটা আপেক্ষিক ভাবে হয়তো মনের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য মানুষকে আরও প্রস্তুত করে। অনেক সময়ে জীবনের সব থেকে বড় শিক্ষণীয় জিনিসটা সব থেকে কঠিন সময় থেকেই শেখে মানুষ।
প্রশ্ন: মেয়েদেরও সেই শিক্ষাই দিয়েছেন?
নীলাঞ্জনা: (হেসে) আমি আর ওদের কী শেখাব। সারার এখন ১৯ বছর, জ়ারার ১২ বছর। ওই যে বললাম জীবন সব কিছু শিখিয়ে দেয়। সারা আমার মায়ের খুবই কাছের মানুষ ছিল। গত বছর দিদার শেষ অবস্থায় সারা কিন্তু মাকে ওই ভাবে দেখতে চায়নি। জ়ারাও সেটাই বলেছিল।
প্রশ্ন: টলিপাড়ায় গুঞ্জন, সারা নাকি খুব শীঘ্র বলিউডে পা রাখতে চলেছে?
নীলাঞ্জনা: কারা এই সব খবর ছড়াচ্ছে আমি জানি না! গুজবের জেরে শেষে ও ইনস্টাগ্রামে একটা স্টোরি দিতে বাধ্য হল। সত্যিই বলছি, এখনও এ রকম কোনও পরিকল্পনা নেই।
প্রশ্ন: সারাকে নিয়ে আপনার কী ইচ্ছা?
নীলাঞ্জনা: সিনেমা, ছোট পর্দা, মডেলিং— ওর যেটা ইচ্ছে সেটাই করবে।
প্রশ্ন: গত বছর থেকে সারা তো মডেলিং শুরু করেছে...
নীলাঞ্জনা: ধীরে ধীরে করছে। বেশ কয়েকটা ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করল। খুবই ভাল অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন: আপনি একজন মহিলা হয়ে পেশা এবং পরিবারকে আগলে রেখেছেন। আজকের সমাজে একজন মহিলার অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলবম্বী হওয়া কতটা জরুরি?
নীলাঞ্জনা: পড়াশোনা শেষ করার পর বাবা সব সময় শিখিয়েছিলেন, যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। ‘হিপ হিপ হুর্রে’ ধারাবাহিকের অভিনয় করার পর জীবনের প্রথম গাড়ি কিনেছিলাম। তার পর নিজের ফ্ল্যাট কিনলাম। অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হলে, মহিলাদের কাছে অনেকগুলি দরজা খুলে যায়। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। মেয়েদেরও আমি সেটাই শিখিয়েছি।
প্রশ্ন: এক সময় চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। অভিনয় থেকে সরে এলেন কেন?
নীলাঞ্জনা: অভিনয় আমার খুবই পছন্দ। মুম্বইয়ে এখনও ছোট পর্দার আমার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। গত বছরেও তাঁদের মধ্যে একজন ফোন করে হিন্দি ধারাবাহিকের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এখানে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ২৫ দিন মুম্বইয়ে থাকতে পারব না। বাবার মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছে। জ়ারা এখন সবে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আমি তো তাদের ফেলে রেখে কেরিয়ার তৈরি করতে এখন মুম্বই পাড়ি দিতে পারব না!
প্রশ্ন: আর পরিচালনা?
নীলাঞ্জনা: (হেসে) না...না! এই বেশ ভাল আছি।
প্রশ্ন: ২০২৪ সালে অনেক কঠিন মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন। নতুন বছর থেকে আপনার কী প্রত্যাশা?
নীলাঞ্জনা: পিছনে তাকিয়ে লাভ নেই। বর্তমান মানে একটা উপহার। আর ভবিষ্যতের উপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই কী ঘটেছে, সেই সব ভেবে কান্নাকাটি না করে হতাশ না হয়ে সামনে তাকাতে চাই। এই বছরে প্রচুর ভাল কাজ করতে চাই। আরও পরিশ্রম করতে চাই। মেয়েদের সঙ্গে প্রচুর পার্টি করব। আর ঘুরতে যাব।
প্রশ্ন: তা হলে আপনাদের তিন জনের পরবর্তী গন্তব্য?
নীলাঞ্জনা: (হেসে) ২১ ফেব্রুয়ারি আমার ৫০তম জন্মদিন। মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছি। তবে গন্তব্য আপাতত চমক রাখতে চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy