Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Coal Miners of Raniganj

চলচ্চিত্রে কতটা ফুটে উঠবে সেই উদ্ধার, অপেক্ষায় রানিগঞ্জ

স্থানীয় সংস্কৃতি-কর্মী বাসুদেব মণ্ডল চট্টোপাধ্যায়, আইনজীবী রত্নপাণি মুখোপাধ্যায়দেরও মতে, ছবির দৃশ্যগ্রহণ মহাবীর কোলিয়ারি বা রানিগঞ্জে তেমন হয়নি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:০৬
Share: Save:

খনিগর্ভে কোনওমতে একটি উঁচু জায়গায় অপেক্ষা করছিলেন ৬৫ জন। আশপাশ জলে ভরা। প্রাণ বাঁচবে কি না, সেই উৎকণ্ঠায় যখন দিন পার হচ্ছে, সেই সময়ে উপর থেকে তৈরি সুড়ঙ্গ দিয়ে নেমে এসেছিলেন তিনি। একে একে সব খনিকর্মীকে উদ্ধারের পরে নিজে উঠে এসেছিলেন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিংহ গিল। রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারিতে ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের এই ঘটনা নিয়ে তৈরি ছবি মুক্তি পাচ্ছে আজ, শুক্রবার। তবে ছবি মুক্তির আগে কিছুটা আক্ষেপের সুর সেই সময়ের ওই খনির কর্মীদের অনেকের গলায়।

ছবির সূত্রে ঘটনার স্মৃতিচারণ উঠে আসে ওই কর্মীদের কথায়। তাঁরা জানান, ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ মহাবীর কোলিয়ারির খনিগর্ভের একাংশ জলে ভরে গিয়েছিল। ৭১ জন খনিকর্মী আটকে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ছ’জনের তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়। বাকিদের ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত গর্ত বা ‘বোরহোল’ তৈরি করে ‘ক্যাপসুল’ নিয়ে নীচে নেমে উদ্ধার করেন গিল। সেই সময়ে ওই কোলিয়ারির কর্মী গোবিন্দ রাউত জানান, খনি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকতেন তিনি। ভোরে খনিতে জল বেড়ে কর্মীদের আটকে পড়ার খবর শুনে ছুটে যান। তাঁকে উদ্ধারের কাজে নিযুক্ত করা হয়। গোবিন্দ জানান, ভূপৃষ্ঠ থেকে ছোট আকারের ‘বোরহোল’ করে প্রথমে
আটকে থাকা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তার পরে তাঁদের খাবার পাঠানো হয়। এই কাজ করেছিলেন অশেষ মাইতি ও পুষ্পেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। পর দিন গিল ২৪ ইঞ্চি ‘বোরহোল’ করে খনির নীচে
ক্যাপসুল নামিয়ে নিজে তিন বার ওঠানামা করেন। তার পরে নিজে নীচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে উপরে পাঠান। সবার শেষে তিনি নিজে উপরে
উঠে এসেছিলেন।

খনির জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল কর্মী সীতারাম দুসাদের। তাঁর ছেলে বালিচরণ বলেন, ‘‘শুনেছি ঘটনাটি নিয়ে ছবি হচ্ছে। তাতে গিল সাহেবের কথা থাকলেও, ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদের কথা থাকবে কি না জানা নেই। মহাবীর কোলিয়ারিতে দুর্ঘটনাটি ঘটলেও, সেখানে কোনও দৃশ্যগ্রহণ হয়নি। তাতে প্রকৃত আবেগ ফুটে উঠবে কি না, আমাদের
সন্দেহ আছে।’’ গোবিন্দ, বালিচরণদের মতে, ওই ঘটনায় জড়িত থাকা অনেকের সঙ্গেই কথা বলেননি ছবির নির্মাতাদের কেউ। তাঁদের অভিজ্ঞতা শোনা হলে হয়তো আরও প্রাণবন্ত হত বিষয়টি। তবে ওই দুর্ঘটনায় খনিতে আটকে পড়া যোগেন্দ্র পাসোয়ান জানান, তাঁর সঙ্গে নির্মাতারা কথা বলেছিলেন।

স্থানীয় সংস্কৃতি-কর্মী বাসুদেব মণ্ডল চট্টোপাধ্যায়, আইনজীবী রত্নপাণি মুখোপাধ্যায়দেরও মতে, ছবির দৃশ্যগ্রহণ মহাবীর কোলিয়ারি বা রানিগঞ্জে তেমন হয়নি। তাতে ওই কোলিয়ারির পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির দেখা মিলবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। এলাকার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘১৯৮৯-এর ১৪ নভেম্বর
খনিকর্মীদের উদ্ধারের পরে ইসিএলের বাঁশড়া এরিয়া হাসপাতাল ভর্তি করানো হয়েছিল। সে দিন হাসপাতালে
যশবন্ত সিংহ গিল ও খনিকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ঘটনাটি
কতটা ঠিক ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন নির্মাতারা, তা মুক্তির পরেই বোঝা যাবে।’’

ছবির রচয়িতা বিপুল রাওয়াল অবশ্য সম্প্রতি রানিগঞ্জে এসে জানান, তিনি মহাবীর কোলিয়ারি এলাকা ঘুরে দেখেছেন। রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে প্রায় সাড়ে সাতশো জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের মধ্যে সেই সময়ে কর্মরতেরাও আছেন। খনি এলাকার প্রায় বারোশো জনকে ছবিতে দেখা যাবে। ২০১৭ সাল থেকে যশবন্ত সিংহ গিলের সঙ্গে বার বার আলোচনাও করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন কারণেই বেশির ভাগ দৃশ্যগ্রহণ বিদেশে করতে হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Raniganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy