Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রুখে তো দাঁড়াই, যা হওয়ার দেখা যাবে

এলাকার অন্য ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দোকানের বাইরে মোটরবাইক নিয়ে এক যুবক দাঁড়িয়ে ছিল, হইচই দেখে সেও চম্পট দেয়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে ছুরি, খেলনা পিস্তল আর লিউকোপ্লাস্ট উদ্ধার করেছে।

সুনসান: ঘটনার পরে বন্ধ সোনার দোকান। নিজস্ব চিত্র

সুনসান: ঘটনার পরে বন্ধ সোনার দোকান। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

হাতে ব্যাগ, নতুন ছুরি আর খেলনা পিস্তল নিয়ে দুই যুবক হানা দিয়েছিল গয়নার দোকানে। কিন্তু, দোকান মালিক রুখে দাঁড়িয়ে পাল্টা ‘আক্রমণ’ করতেই তাঁরা পগারপার। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর এলাকার ঘটনা।

এলাকার অন্য ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দোকানের বাইরে মোটরবাইক নিয়ে এক যুবক দাঁড়িয়ে ছিল, হইচই দেখে সেও চম্পট দেয়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে ছুরি, খেলনা পিস্তল আর লিউকোপ্লাস্ট উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ভয় দেখানোর জন্য খেলনা পিস্তল নিয়ে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার রাতে বিসি রোড ধরে একটি মোটরবাইকে তিন জন মোদক মার্কেটের সামনে দাঁড়ায়। দু’জনের বয়স বছর আনুমানিক সাতাশ, অন্য জন বছর পঁয়ত্রিশের। দু’জন মার্কেটে ঢোকে। ভিতরে থাকা আটটি গয়নার দোকানের মধ্যে ভাতছালার বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্রের দোকান খোলা ছিল। তিনি তখন দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ ওই দু’জন দোকানের ভিতর ঢুকে শাটারের অর্ধেকটা নামিয়ে দেয়। তার পরেই বছর পঞ্চান্নর ব্যবসায়ীর গলায় ছুরি ধরে বলতে থাকে, ‘প্রাণের মায়া থাকলে যা আছে দিয়ে দে’। অন্য দুষ্কৃতী খেলনা পিস্তল দেখিয়ে চাবির খোঁজ করছিল। সুভাষবাবু ভয়ে দোকানের কোণে চলে যান।

রবিবার সকালে বাড়িতে বসে সুভাষবাবু বলেন, “পিস্তল ধরে থাকা যুবকটি আমার মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগাচ্ছিল। তখন আমার মনে হয়, যা হওয়ার হবে। রুখে তো দাঁড়াই!” ব্লাড সুগার আর হাই প্রেশারের রোগী লম্বা-চওড়ার মানুষটি ঝটকা মারতেই দুষ্কৃতীর হাতে ছুরি ছিটকে পড়ে। এর পরে সুভাষবাবু ঘুষি মারতে উদ্যত হলে দুষ্কৃতীরা টাল সামলাতে না পেরে দোকানের ভিতরে একে অন্যের ঘাড়ে পড়ে যায়। সুভাষবাবুর কথায়, “ধরার চেষ্টা করতেই ওরা শাটারের তলা গলে পালিয়ে যায়।” ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বছর দেড়েক আগে মিঠাপুকুরে পরপর দুটি দোকানে ডাকাতি হয়। দুষ্কৃতীরা দোকানের সিন্দুক নিয়ে চম্পট দিয়েছিল। ব্যবসায়ী সুরজিৎ মান্না, নাসিম খান থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিকরা বলেন, “সুভাষবাবু সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ানোয় ছিনতাইকারীরা পালিয়েছে।”

সুভাষবাবুর স্ত্রী আগমনীদেবী বলছেন, “মোক্ষম সময়ে সাহস দেখিয়েছেন উনি। এই সাহসই ওঁকে আর আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে দিল।” কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রেখে সুভাষবাবু যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তার প্রশংসা করছেন জেলার পুলিশ কর্তারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE