Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Mita Paramanyo

মেয়েদের ক্ষমতা চেনাতে প্রস্তুত মিতা

ছ’বছর ধরে মেদিনীপুরের একটি শিল্প সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মিতা।

 মিতা পরমান্য। নিজস্ব চিত্র

মিতা পরমান্য। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০০:১২
Share: Save:

তিন কুলে ভাস্কর্য তৈরি তো দূর, রং-তুলির সঙ্গেও কারও যোগ ছিল না। কিন্তু কয়েকবছর আগে শান্তিনিকেতনে ঘুরতে গিয়ে আল্পনা, ভাস্কর্য, ছবি আঁকায় প্রাণের টান খুঁজে পেয়েছিলেন শক্তিগড়ের কল্যাণপুর-দানগাছা গ্রামের তরুণী। হার না মানা জেদেই শিল্পীর স্বীকৃতি আদায় করেছেন বাইশ বছরের মিতা পরমান্য। নিজে রোজগার করে আর্ট কলেজে পড়ার খরচ জোগাচ্ছেন। সংসার খরচের একটা বড় অংশও রয়েছে তাঁর দায়িত্বে।

ছ’বছর ধরে মেদিনীপুরের একটি শিল্প সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মিতা। ওই সংস্থার কর্ণধার সুজিত পাত্র বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতনে ঘুরতে এসেছিলেন মিতা। সেখানেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। মিতার উৎসাহ দেখে আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই জানার পরে আমার দলে যোগ দিতে বলি। তখন থেকেই আমার সঙ্গে কাজ করছেন উনি।’’

কলকাতা, দুর্গাপুর, মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ করেন মিতা। বছরের অন্য সময় ঘর-বাড়ি সাজানো বা শৌখিন জিনিসপত্রও তৈরি করেন। পরিশ্রমের জোরে আল্পনা, ভাস্কর্য, আঁকা থেকে কম্পিউটার গ্রাফিক্সেও পারদর্শী হয়ে উঠেছেন মিতা।

এ বার বর্ধমান শহরের ইছালাবাদের একটি পুজো মণ্ডপে আল্পনা এঁকেছেন মিতা। তার ফাঁকেই তিনি বলেন, ‘‘লড়াইটা সহজ ছিল না। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অজানা শিল্পের টানে বাড়ির বাইরে পা রাখা নিয়ে চার দিক থেকে নানা কটূক্তি শুনতে হয়েছে।’’ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরে, আর্ট কলেজে ভর্তি হন তিনি। মিতার দাবি, ‘‘রাত করে বাড়ি ফেরা নিয়ে এখনও নানা কথা শুনতে হয়। আমার ভাগ্য ভাল, বাবা-মাকে পাশে পেয়েছি। সাহসের সঙ্গে কাজে উৎসাহ দিয়েছেন তাঁরা।’’

মিতার বাবা, পেশায় রাজমিস্ত্রি সুবলচন্দ্র পরমান্য বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই মেয়ের আঁকায় উৎসাহ ছিল। ও যখন বলল, আর্টের কাজ শিখে বড় হতে চায়, আমরা ওর পাশে দাঁড়িয়েছি।’’ মা সুমিত্রাদেবীও বলেন, ‘‘দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে হয়েছে। এখন সবাইকে কিছু না বলেও জবাব দিচ্ছে মেয়ে।’’ তিনি জানান, তাঁদের অনটনের সংসারে মিতাই ‘ছাতা’। শুধু নিজের পড়ার খরচ নয়, ভাইয়ের পড়াশোনা, সংসারের প্রয়োজনও মেটাচ্ছেন তিনি।

মিতার সহকর্মীরা জানান, মণ্ডপ তৈরির কাজে সৃষ্টিশীলতা খুব জরুরি। মূল শিল্পীর মনের ভাষা বুঝে কাজ করে নেওয়ার ক্ষমতা লাগে। মিতার সব গুণই রয়েছে। মিতা জানান, তাঁর স্বপ্ন নিজের একটা দল গড়া। তাঁদের নিয়েই কলকাতা থেকে দেশের বাইরে ঘুরে কাজ করতে চান তিনি।

মিতা বলেন, ‘‘মেয়েরা বাড়ির বাইরে পা রেখে দুনিয়া চিনুক, স্বাধীন ভাবে কাজ করুক, এখনও চান না অনেকে। আমার ইচ্ছে, শুধু মেয়েদের নিয়ে দল গড়ে সবাইকে জবাব দেব। আমাদের মত নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা অনেক মেয়ে স্বনির্ভরও হতে পারবেন।’’

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য গার্গী নাহা বলেন, ‘‘এক দিকে আর্থিক, অন্য দিকে সামাজিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে মাথা উঁচু করে কাজ করা, তার সঙ্গে স্বনির্ভরতা স্বপ্ন দেখছেন যিনি, তাঁকে আমাদের কুর্নিশ।’

অন্য বিষয়গুলি:

Mita Paromanyo Girl Power Sculpture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE