এমনই হাল সিটি সেন্টারের জলাশয়ের। ছবি: বিকাশ মশান
এক সময় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা দেখা যেত এখানে। কিন্তু, বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্মাণকাজ, জঙ্গল সাফ, বর্জ্য ফেলা, জল তোলা-সহ নানা কারণে মজে যেতে বসেছে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের প্রাচীন জলাশয়টি। ফলে এই মুহূর্তে পাখিদের ঠিকানা বিপন্ন বলে জানান শহরের পক্ষীপ্রেমীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় জলাশয়টির চারদিক ছিল জঙ্গলে ঘেরা। কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অম্বুজা আবাসন এলাকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সাফ হতে থাকে জঙ্গল। ২০০৭-র ২ অগস্ট জলাশয়ের পাশে একটি বাড়ির ভিত খোঁড়ার সময় একটি প্রাচীন সুড়ঙ্গ নজরে আসে নির্মাণকর্মীদের। সুড়ঙ্গটির এক দিক জলাশয়ে শেষ হয়েছে। রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ জানায়, সুড়ঙ্গটি মধ্যযুগের। রোমান শৈলীর ছোঁয়া থাকা এমন স্থাপত্য রাজ্যেই আর নেই বলে জানানো হয়। ‘পশ্চিমবঙ্গ ঐতিহাসিক পুরাবস্তু ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও প্রত্নক্ষেত্র খনন আইন ১৯৫৭’-র ৩ ধারা ১ উপধারা অনুসারে সুড়ঙ্গটি ‘সংরক্ষিত’ হিসেবে ঘোষিত হয়। ধীরে ধীরে জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি ও ওই সুড়ঙ্গ দেখতে অনেকেই আসতে শুরু করেন।
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, ফি বছর শীতে বেশ কয়েকটি প্রজাতির হাঁস (ডাক) ওই জলাশয়ে আসত। ‘অ্যানাটিডি’ পরিবারের ওই পাখিরা জলে থাকে। জলাশয়ে ‘বার হেডেড ডাক’, ‘গারগেনি ডাক’, ‘সোভিলার ডাক’ ও ‘স্পট বিলড ডাক’, এই চার ধরনের ‘ডাক’-এর উপস্থিতি নথিবদ্ধ করা হয়। এক সময় শীতকালে জলাশয়ে পাখিদের আনাগোনা ছিল নজরকাড়া।
কিন্তু এখন আর তা থাকে না বলেই জানান বাসিন্দারা। একমাত্র গত কয়েক বছরে কিছু পাখি এখানে পাকাপাকি ভাবে থেকে গিয়েছে। সেগুলিরই এখন দেখা মেলে।
কেন এমন হাল? এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, জলাশয়ের চারিদিকে বাড়ি তৈরি হয়েছে। জলাশয়ের এক দিকে কিছুটা জল রয়েছে। সেখানে কয়েকটি পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জলাশয়ের মজে যাওয়া অংশ থেকে রাতে গোপনে পাম্প চালিয়ে জল তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত গৃহস্থালীর আবর্জনা, প্রতিমার কাঠামো, প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে জলাশয়ে। জমছে নানা নির্মাণ সামগ্রীও। জলাশয়ের পাড়ে একটি বহুতল নির্মাণের জেরে ক্ষতি হচ্ছে জলাভূমির, এই অভিযোগে ২০১৬-র শুরুতে মামলা দায়ের হয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতে। নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত। পরে অবশ্য বিষয়টি মিটে যায়। আবর্জনা ফেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বোর্ড লাগায় বন দফতর। কিন্তু অভিযোগ, এর পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।
বন দফতর জানায়, পরিযায়ী পাখিদের কথা না ভেবে যে ভাবে জলাশয়ের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে তাতে কত দিন আর তারা আসবে তা নিয়ে সংশয় আছে। ডিএফও (দুর্গাপুর) মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই ধরনের পরিযায়ী পাখিরা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে থেকে যায়। তাই জলাশয় সাফ রাখাটা খুবই জরুরি।’’ পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা স্থানীয় ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রিন সিটি প্রকল্পে ওই জলাশয় সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন করা হবে। আশা করি দ্রুত কাজ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy