Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Awas Yojana Homes

অধরাই পাকা বাড়ির স্বপ্ন, খেদ দেবী-সুমির

পশ্চিম বর্ধমানের প্রান্তিক দু’টি ব্লক সালানপুর ও বারাবনিতে এমন কয়েক হাজার পরিবার রয়েছে, যাদের বাস মাটির দেওয়াল ও পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে।

মেলেনি সরকারি প্রকল্পের বাড়ি। সালানপুরে।

মেলেনি সরকারি প্রকল্পের বাড়ি। সালানপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

সুশান্ত বণিক
সালানপুর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৭
Share: Save:

দৃশ্য ১: গ্রামের নাম মাধাইচক। মাটির দেওয়াল। শতছিন্ন পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়েছিলেন সুমি মেঝান। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু বললেন, ‘‘এ বারও দিল না।’’

দৃশ্য ২: গ্রামের নাম কোটশাল। স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে উনুনের ছাই ছড়াচ্ছিলেন অশীতিপর দেবী কোড়া। জানালেন, মেঝেটা কখনও শুকোয় না। তাই ছাই ছিটিয়ে দিতে হয়। না হলে ভিজে যায় বিছানা। জানালেন, এ বার পাকা বাড়ি জুটবে ভেবেছিলেন। কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি।

দৃশ্য ৩: গ্রামের নাম জনার্দনসায়ের। ফুটিফাটা এক কামরার মাটির বাড়িতে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাস ভুবন বাউড়ির। টালির চাল ভেঙে গিয়েছে। পকেটের জোর নেই। তাই পঞ্চায়েত থেকে চেয়ে-চিন্তে একফালি ত্রিপলের ছাউনি টাঙিয়ে কোনও রকমে দিন চলছে। আক্ষেপ তাঁর গলাতেও, ‘‘সরকারের দেওয়া পাকা বাড়ির স্বপ্ন এই জন্মে হয়তো অধরাই থেকে যাবে।’’

পশ্চিম বর্ধমানের প্রান্তিক দু’টি ব্লক সালানপুর ও বারাবনিতে এমন কয়েক হাজার পরিবার রয়েছে, যাদের বাস মাটির দেওয়াল ও পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে। পরিবারগুলির অনেকেরই দাবি, গত ১০ বছরে একাধিক বার পাকা বাড়ি পাওয়ার আবেদন করেছেন ব্লক প্রশাসনের কাছে। প্রতি বারই প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কিন্তু সরকারি অনুমোদনের চিঠি পাননি। অথচ, এই জেলাতেই প্রায় আট হাজার নাম বাদ পড়েছে বাড়ি প্রাপকের তালিকা থেকে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে তাঁরা বাড়ি পাওয়ার অযোগ্য। বিরোধীদের প্রশ্ন, তাহলে এমন প্রাপকের নাম তালিকায় উঠল কী ভাবে, যাঁরা অযোগ্য? তার ফলে তো যোগ্য কয়েক হাজার মানুষ সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলেন।

মাধাইচকের বাসিন্দা সুমি মেঝান বলেন, ‘‘হাঁটতে পারি না। তবু কষ্ট করে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে কাগজ জমা দিয়েছিলাম। বর্ষায় ঘরে জল পড়ে। কিন্তু ওরা বাড়ি করে দিল না।’’ দেবী কোড়ার কথায়, ‘‘পাঁচ বার আবেদন জমা করেছি। আর ভাল লাগে না প্রশাসনের দুয়ারে বার বার চরকি কাটতে। আমরা গরিব, তাই কেউ কথা শোনে না।’’ সালানপুরের এথোড়া গ্রামে ঢোকার মুখে পর পর মাটির বাড়ির সারি। বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, বাড়ির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রায় কেউই পাননি। সুমিত্রা বাউড়ি, প্রতিমা বাউড়ি, শিল্পা বাউড়িদের দাবি, কমপক্ষে পাঁচ বার আবেদন জমা করেছেন। কিন্তু অনুমোদন আসেনি।

সালানপুরের বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস যদিও জানান, সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি প্রাপকের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিছু বাদ পড়বে। এখনও সেই তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। বার বার আবেদন করেও প্রাপকের তালিকায় নাম না ওঠার বিষয়ে অনেকের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিডিও বলেন, ‘‘এই তালিকা ২০১৮ সালে তৈরি হয়েছে। এর পরে কখন কী হয়েছে, তা বলা সম্ভব নয়। তবে সকলকেই আবেদন করতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফের বাড়ির অনুমোদন এলে ব্যবস্থা হবে।’’

বারাবনির বিডিও শিলাদিত্য ভট্টচার্য বলেন, ‘‘বারাবনি ব্লকে প্রায় আড়াই হাজার বাড়ি প্রাপকের নাম প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৮৩৩টি নাম বাদ পড়েছে।’’ তিনি জানান, যাঁরা বাড়ি পাওয়ার আবেদন করা সত্ত্বেও নাম ওঠেনি, ভবিষ্যতে ফের বাড়ির অনুমোদন এলে সেগুলির বিষয়টি দেখা হবে।

ফের অনুমোদন কবে আসবে, সে বারও নাম আদৌ উঠবে কি না, প্রশ্ন কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের। (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Bangla Awas Yojana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy