প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে হুগলির চুঁচুড়া থেকে বর্ধমান আদালতে এসেছিলেন নসিব শেখ। এসে জানলেন, আইনজীবীরা এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হতাশ নসিব বলেন, ‘‘আইনজীবীদের এই আচরণে আমাদের মত গরিব মানুষদের কষ্ট হচ্ছে। এ ভাবে বিপাকে ফেলার কোনও মানে হয়!’’ বিচারকদের ‘চাপে’ রাখতে আজ, বুধবার বর্ধমান আদালতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন আইনজীবীরা।
এক মাস ধরে সিজেএম সঞ্জয়রঞ্জন পাল আদালতে হাজির থাকলে শুনানিতে যাচ্ছিলেন না আইনজীবীরা। তবে ভারপ্রাপ্ত সিজিএম এজলাসে এলে তাঁরা শুনানিতে যোগ দিচ্ছিলেন। তাতে কিছুটা হলেও বিচারপ্রার্থীদের সমস্যা লাঘব হচ্ছিল। মঙ্গলবার থেকে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছেন আইনজীবীরা। সিজেএম এজলাসই বয়কট করছে বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন।
একই চিত্র দেওয়ানি আদালতের (সিনিয়র ডিভিশন) বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাসেও। মঙ্গলবার থেকে তাঁর এজলাসও পুরোপুরি বয়কট করছেন আইনজীবীরা। এর আগেও মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস বয়কট করেছিলেন আইনজীবীরা। তবে শেষ পর্যন্ত তা তুলে নিতে বাধ্য হন তাঁরা। দেওয়ানি আদালতের আইনজীবীদের একাংশের দাবি, বিচারক এজলাসে তাঁদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করছেন। এক মাস এজলাস বয়কট করার পরেও বিচারকের মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি অভিযোগ তুলে বার অ্যাসোসিয়েশন পুরো এজলাসটাই বয়কট শুরু করেছে। কিছু আইনজীবীর অবশ্য দাবি, ১৯৮৫ সাল থেকে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি করছেন বিচারক। প্রভাবশালী-আইনজীবী গোষ্ঠীদের বিরোধিতার পরেও বিচারক মামলা ফেলে রাখছেন না, সরাসরি বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাতেই আইনজীবীদের ‘গোসা’ হয়েছে।
সিজেএম এজলাস বয়কটের জন্য উচ্চ আদালতে আগাম জামিন মিললেও জেল-হাজত থেকে বেরোতে পারবেন না অভিযুক্তেরা। এ রকম বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী সমস্যায় পড়েছেন। ভাতারের মাধপুরের শেখ ইসরাইল বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মারপিট হয়। দু’পক্ষই উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েছে। কিন্তু সিজেএম আদালত বয়কট থাকায় পাকাপোক্ত জামিন মিলছে না।’’ আইনজীবীদের একাংশের ক্ষোভ, জামিনযোগ্য ধারায় অভিযুক্তদেরও বিচারক জেল-হাজতে পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়াও এজলাসে বসে লিখিত নির্দেশ না দেওয়া-সহ নানা অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক পার্থ হাটি দাবি করেন, “আমরা সিজেএমের কাছে ঠিক বিচার পাচ্ছি না। বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির মধ্যে পড়ছেন।’’ বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সদন তা-র অভিযোগ, ‘‘বারবার আইনজীবীরা অসম্মানিত হচ্ছেন। বিচারপ্রার্থীরা যাতে ঠিক বিচার পান, সে জন্যই আমাদের আন্দোলন।’’ কিন্তু এর জেরেও যে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনও সদুত্তর আইনজীবীরা দিতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy