রোষ: জ্বলছে জেসিবি মেশিন, বর্ধমান-কাটোয়া রোডে ক্ষেতিয়ায়। ছবি: উদিত সিংহ
রাস্তা চওড়া করার কাজ করছে পূর্ত দফতর নিযুক্ত ঠিকা সংস্থা। সেই কাজে আসা পাথর বোঝাই ডাম্পারের তলায় পিষে গেলেন ওই দফতরেরই অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। শুক্রবার দুপুরে ওই ঘটনার জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে দেওয়ানদিঘি থানার ক্ষেতিয়া এলাকা। উত্তেজিত জনতা ওই ডাম্পারের সঙ্গে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের পাশে দাঁড়ানো দু’টি মাটি কাটার যন্ত্রে (জেসিবি) আগুন লাগিয়ে দেয়। বর্ধমান ও ভাতার থেকে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে গেলে পুলিশও আক্রান্ত হয়। র্যাফ ও বড় পুলিশ বাহিনী প্রায় তিন ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শেখ নুরুল ইসলাম (৬৩) বর্ধমান থেকে মোটরবাইকে এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ ভাতারে ধরমপুর গ্রামে, নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক চওড়া করা হচ্ছে। সে জন্য ঠিকাদার সংস্থা দু’দিকেই খাল করে রাখায় রাস্তা সরু হয়েছে। ঘটনার সময় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ওই ডাম্পারটি মশলা মেশানো পাথর ফেলছিল। ঠিক তার পিছনে মোটরবাইকে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। জায়গাটি ধরমপুর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার। উল্টো দিক থেকে কাটোয়ামুখী একটি বাস আসছে দেখে নুরুল ইসলাম দাঁড়িয়ে পড়েন। ডাম্পারটি পিছোতে গিয়ে মোটরবাইকে ধাক্কা মারে।
পুলিশ জানায়, মোটরবাইক সমেত ডাম্পারের তলায় আটকে পড়েন ওই বৃদ্ধ। ওই অবস্থায় ডাম্পারটি কিছুটা দূরে যাওয়ার পরে দাঁড়িয়ে পড়ে। দেহ এতটাই তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল যে, বেলচা দিয়ে দেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে পুলিশরে। মোটরবাইকটিও দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে রাজ্য সড়কের উপরে মৃতদেহ পড়েছিল। খবর পেয়ে ধরমপুর-সহ আশপাশের তিন-চারশো লোক জড়ো হন। তাঁদেরই একাংশ রাস্তায় চলাচলকারী কয়েকটি গাড়িতে ইট ছুড়তে থাকেন। ওই সব গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। রাস্তায় পরপর গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরেই জনতা ঘাতক ডাম্পারটিতে অগ্নিসংযোগ করে। সেখান থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার ধারে জমিতে থাকা দু’টি মাটি কাটার যন্ত্রেও আগুন লাগানো হয়।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্ধমান-কাটোয়া রোডের উপরে রেল ওভারব্রিজের সংযোগকারী রাস্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য রাজ্য সড়কটিও চওড়া করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো সংযোগকারী রাস্তা থেকে নর্জার কাছ পর্যন্ত বর্ধমান-কাটোয়া রোডের দু’পাশ চওড়া করা হচ্ছে। সেই কাজের পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা সাবির আলি, লুৎফর রহমানদের অভিযোগ, “কাজ শুরুর দিন থেকে ঠিকাদার সংস্থাকে এক দিক খোলা রেখে কাজ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার রাস্তার দু’দিকই গর্ত করে কাজ করছে। এর ফলে, রাস্তা আরও সরু হয়ে গিয়েছে। তাতেই এত দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ এখনও পর্যন্ত এক মহিলা-সহ ৫ জন মারা গিয়েছেন বলেও এলাকাবাসীর দাবি।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সদ্য বিজয়ী জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসান বলেন, “গ্রামবাসীর দাবি মেনে পূর্ত দফতরকে কাজ করতে অনুরোধ করব।’’ পূর্ত দফতর (সড়ক) অবশ্য জানিয়েছে, রাস্তা এখনও যথেষ্ট চওড়া রয়েছে। এ দিনের ঘটনার সম্পর্কে বিশদে রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy