মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পানাগড় শিল্পতালুকের প্রসঙ্গ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরের উল্লেখ ছাড়া বুধবার পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক সভা থেকে পশ্চিম বর্ধমানের শিল্প নিয়ে কোনও কথা শোনা গেল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায়। পাশাপাশি, অতীতে বহু বার জেলার পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে কথা বললেও, এ বার সেই প্রসঙ্গেও তিনি নীরব। লোকসভা ভোটের আগে জেলার রাজনীতির এই দু’টি বিষয় নিয়ে মমতার এমন নীরবতা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
জেলার রাজনীতিতে শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করিয়ে দিচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে অন্তত ২৪ লক্ষ শ্রমিক রয়েছেন এই জেলায়। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশই অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি। শ্রম দফতরের আসানসোল মহকুমার উপশ্রম অধিকর্তা জানাচ্ছেন, জেলায় রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষ ২৫ হাজার অসংগঠিত শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত করে তাদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে যুক্ত করেছে। জেলার রাজনীতিতেও কল্যাণ রায়, রবীন সেন, আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়, হারাধন রায়, বিকাশ চৌধুরীদের মতো শ্রমিক নেতাদের সাংসদ হতে দেখা গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মমতা শিল্প নিয়ে শুধু দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন— “পানাগড়ে শিল্পতালুক রয়েছে”। পাশাপাশি বলেন, “ডানকুনি থেকে বর্ধমান, পানাগড় হয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর যাচ্ছে রঘুনাথপুরে। অনেক চাকরি হবে। আর একটা ডানকুনি থেকে হলদিয়া। উত্তরবঙ্গে আর
একটা করে দিচ্ছি।”
এ দিকে, ধস কবলিত এলাকার ২৯ হাজার পরিবারের পুনর্বাসন পাওয়ার কথা। এখনও তা পেয়েছে মাত্র ১৫৬টি পরিবার। এ ছাড়া, ১০,১৪৪টি বাড়ির পরিকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাকি বাড়িগুলি কী ভাবে হবে, তা কেন্দ্র ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের নোডাল এজেন্ট আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) ‘ওএসডি’ তন্ময় রায়। এই বিষয়টি নিয়ে অতীতে একাধিক বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। কিন্তু এ বার এই প্রসঙ্গে তিনি কিছুই না বলায় বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে হতাশ শিল্পোদ্যোগীরাও। ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান জানান, তাঁরা আশা করেছিলেন শিল্পের জমি-সমস্যা, বিদ্যুৎ ও সহজ কিস্তিতে ঋণে ভর্তুকি, ‘এক জানলা নীতি’ কার্যকর করা প্রভৃতি বিষয়ে কোনও বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন নীরবতা নিয়ে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “সেন-র্যালে কারখানার পুরো পরিকাঠামোর মতোই বন্ধ এইচসিএল-এর জমি-বাড়ি বিক্রি করছেন তৃণমূল কর্মীরা। সেখানে শিল্প আর পুনর্বাসন নিয়ে কী বলবেন মুখ্যমন্ত্রী।” বিএমএসের জেলার যুগ্ম সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের তোপ, “ডিপিএলকে রুগ্ণ করে দেওয়া, কাজের অভাবে কয়লা কাটতে গিয়ে গরিব মানুষের মৃত্যুর মতো নানা কিছু হয়েছে এই জেলায়। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর হয়তো শিল্প নিয়ে কিছু বলার মুখ নেই।” যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী জেলায় শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবের কথা বলেছেন। বিরোধীরা আসলে কিছুই দেখতে পান না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy