Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
Inspirational

আঠারোতেই দশভুজা স্নেহা

বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকার বাসিন্দা স্নেহা মণ্ডল মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন রামাশিষ হিন্দি হাই স্কুল থেকে।

আনাজের পসরা নিয়ে টুম্পা।

আনাজের পসরা নিয়ে টুম্পা। নিজস্ব চিত্র ।

সুপ্রকাশ চৌধুরী
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:২৬
Share: Save:

সবে আঠারোয় পা দিয়েছেন। স্টেশন বাজারে পটল, বেগুন, টোম্যাটোর মতো আনাজের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন রোজ। বেচাকেনার ফাঁকে উঁকি দেয় চিন্তা— কী ভাবে স্নাতক হবেন, কী ভাবেই বা ভাইবোনকে স্বাবলম্বী করবেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে তিনিই এখন সংসারের কর্ত্রী। তাঁকে দশভুজা হতে হয়েছে আঠারোতেই।

বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকার বাসিন্দা স্নেহা মণ্ডল মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন রামাশিষ হিন্দি হাই স্কুল থেকে। মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৫৫ শতাংশ নম্বর। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্তি ৫৮ শতাংশ নম্বর। এখন ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিন্দিতে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করছেন স্নেহা। ভাই কুণাল একাদশের পড়ুয়া। বোন নাতাশা মাধ্যমিক দেবে। স্নেহার বাবা ট্রেনে হকারি করতেন। রোগে ভুগে তাঁর মৃত্যু হয় পাঁচ বছর আগে। তার পরে স্নেহার মা ট্রেনে হকারি শুরু করেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে তিনিও মারা যান। স্নেহার পরিবারে ভাই-বোন ছাড়া রয়েছেন বৃদ্ধা দিদা। নাতনিকে আনাজ বিক্রিতে সাহায্য করেন তিনি।

কী ভাবে চলে সংসার? স্নেহা বলেন, ‘‘খুব ভোরে চলে আসি রানিগঞ্জ বাজারে। পাইকারি বাজার থেকে আনাজ কিনে চলে আসি বর্ধমান স্টেশন বাজারে। সেখানেই সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তার পরে বাড়ি ফিরে দিদিমাকে সঙ্গে নিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করি। তার পর পড়তে বসি। স্নাতক হতেই হবে। মা-বাবা অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন আমার কাঁধে। চাকরি পেতে হবে, ভাই-বোন দু’টোকে উচ্চশিক্ষিত করতে হবে।’’

স্নেহার ঘরে অভাবের চিহ্ন স্পষ্ট। জীর্ণ ঘরের ছাউনি ভেদ করে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টির জল পড়ে। সেই ঘরে থেকেই লড়ছেন তিনি, যাতে ভাইবোনেরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। স্নেহার কথায়, ‘‘মা-বাবা মারা যাওয়ার পরে আমিই ওদের বড়। আমার দায়িত্ব ওদের মানুষ করা। তাই এই লড়াই।’’ স্নেহার লড়াইয়ের সাক্ষী স্থানীয় সমাজসেবী শরৎ কোলে। তিনি বলেন, ‘‘কখনও ত্রিপল, কখনও টিন দিয়ে ওদের বাড়িটাকে রক্ষা করেছি আমরা। আরও নানা ভাবে ওর পাশে দাঁড়াই। স্নেহার লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। আমার বিশ্বাস ওর স্বপ্ন সফল হবে।’’ জেলার চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বীরাঙ্গনা পুরস্কারের জন্য স্নেহার নাম জেলা থেকে পাঠানো হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের কাছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2024 Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE