লম্বা-লাইন: এমএএমসি পোস্ট অফিসে। নিজস্ব চিত্র
মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ তুলতে গিয়ে ভোর থেকে লাইন দিয়েও সিটি সেন্টার ডাকঘর থেকে পর পর তিন দিন ফিরে এসেছেন নন-কোম্পানির তপন রায়।
পকেটে ২১ হাজার টাকার চেক নিয়ে গিয়ে চার দিন ধরে ১০ নম্বর ডাকঘর থেকে খালি হাতে ফিরছেন এমএএমসি কলোনির কাঞ্চন মণ্ডল।
ঘণ্টাখানেক লাইন দিয়েও শেষ পর্যন্ত বি-জোনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে পারলেন না চণ্ডীদাস এলাকার প্রণতি ঠাকুর।
‘লিঙ্ক ফেলিওর’।
এই শব্দবন্ধ এখন দুর্গাপুর শহরের ডাকঘর ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের কাছে চরম আতঙ্কের। এই সমস্যা মিটতে এক-দু’ঘণ্টা লাগতে পারে, আবার সারাদিনও কেটে যেতে পারে। সময় ও শ্রম— দু’ই জলে। কী করে এর থেকে রেহাই মিলবে জানেন না তাঁরা। জানেন না ডাকঘর বা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও!
দুর্গাপুরে বহু প্রবীণ বাসিন্দার ডাকঘরের সঙ্গে যোগাযোগ মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের সূত্রে। মাসিক সুদ তুলে তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটান তাঁরা। শহরের সব ডাকঘরেই চালু হয়েছে ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা।
গ্রাহকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, কোনও দিন দিনের কাজ শুরু হওয়া থেকেই ‘লিঙ্ক’ থাকে না। কখনও কাজ শুরুর পরেই চলে যায় ‘লিঙ্ক’। ঘণ্টার পরে ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ‘লিঙ্ক’ আর ফেরে না। ফলে, প্রয়োজন মিটতে কারও লেগে যাচ্ছে সপ্তাহখানেক, কারও বা তারও বেশি। বয়স্কদের পক্ষে এ ভাবে এক কাজের জন্য বার বার ডাকঘর যাওয়া-আসা খুবই সমস্যার।
বিধাননগরের অসীম বসু যেমন বললেন, ‘‘জমানো টাকার সুদ থেকেই ওষুধ, দুধ, বাজার করার খরচ মেটে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ না হওয়ায় কেউ কেউ অশান্তি করে ফেলছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’ সমস্যায় পড়ছেন স্বল্প সঞ্চয়, ফিক্সড ডিপোজিট স্কিমের গ্রাহকেরাও। দুর্গাপুর স্টেশন এলাকার এক গ্রাহক সুস্মিত গুহ বলেন, ‘‘দিনের পর দিন এ ভাবে হয়রান হতে হলে সাধারণ মানুষ ডাকঘর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। অন্য কোথাও টাকা জমা রাখবেন তাঁরা।’’
বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের তেমন কিছু করণীয় নেই বলে জানাচ্ছেন ডাকঘরের কর্মীরা। তাঁদের মতে, ‘ম্যানুয়াল’ ব্যবস্থা থাকলে অসুবিধা হতো না। কিন্তু ‘অনলাইন’ ব্যবস্থায় উপযুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ক্ষেত্রে এক পা-ও এগনো যায় না। এমন পরিস্থিতিতে ডাকঘরে এটিএম চালুর দাবি করেছেন কেউ কেউ। সে ক্ষেত্রে ডাকঘরের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও অন্তত টাকা তোলার প্রয়োজনটুকু মিটবে। ডাক বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। এটিএম গড়া হয়েছে। তবে তা চালু করা হয়নি। সমস্যা রয়েছে নানা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখাতেও। ডাকঘরের মতো দীর্ঘস্থায়ী না হলেও ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ হয় মাঝে মাঝেই। নাকাল হতে হয় গ্রাহকদের।
গ্রাহকেরা জানান, ব্যাঙ্কের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেওয়া বা তোলার সময় হঠাৎ ‘লিঙ্ক’ চলে গেলে, কিছু করার নেই। ‘লিঙ্ক’ না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু সেটা কতক্ষণ কেউ জানেন না।
দুর্গাপুর এলাকার ডাকঘর বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা দেয় বিএসএনএল। সংস্থার আসানসোল ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার পিকে মহাপাত্রের আশ্বাস, দুর্গাপুর কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy