Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
rehabilitation project

পুনর্বাসন নিয়ে চাপান-উতোর

এই প্রকল্প নিয়ে টানাপড়েন জেলার দীর্ঘদিনের চর্চার বিষয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৭
Share: Save:

ফের জেলার ধস কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্পের বিষয়টি নিয়ে চর্চা হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইসিএল এবং রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে।

বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠি জানান, প্রায় ৩১ হাজার আবাসন তৈরি করতে হবে। ১২ হাজার আবাসন তৈরির কাজ চলছে। আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘যেখানে জায়গা দেখা হচ্ছে, সেখানেই জমির নীচে কয়লা থাকার কথা বলে কাজের অনুমতি দিচ্ছে না ইসিএল। অথচ, তলায় কয়লা আছে এমন জায়গায় ইসিএলের নিজস্ব কার্যালয়, ভবন রয়েছে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিষয়টা নিয়ে প্রয়োজনে কলকাতায় বৈঠক হবে। আমরা ইসিএল-কে কাজ করার জন্য জমি দিচ্ছি। ইসিএল পুনর্বাসনের জায়গা না দিলে ধসের জেরে প্রাণহানি ঘটলে, তার দায় সংস্থাকেই নিতে হবে। আগেও ইসিএল-কে চিঠি দিয়েছি। ফের দেব।’’ ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় অবশ্য বলেন, “ফাঁকা জমি খোঁজা হচ্ছে। অনেক গভীরে কয়লা আছে এমন জায়গা খুঁজে পেলে সেই জায়গায় কাজ করা যাবে। সে চেষ্টা আমরাও চালাচ্ছি।”

বাকি আবাসন তৈরির ক্ষেত্রেও প্রধান বাধা জমি বলে আবাসন তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) সূত্রে জানা যায়। পর্ষদের অনুযায়ী, ‘বাধা’গুলি— প্রথমত, সালানপুরের নামোকেসিয়ায় প্রায় ২৭ একর জমিতে ১,৯০৪টি আবাসন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হলেও সেখানে এলাকাবাসীর বাধায় প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যায়নি। দ্বিতীয়ত, এডিডিএ মোট ৫১৪ একর জায়গা চিহ্নিত করলেও প্রায় সওয়া তিনশো একর জমি খুবই স্বল্প দৈর্ঘ্যের। ফলে, সেখানে আবাসন তৈরি করা যাবে না। তৃতীয়ত, এডিডিএ-র অভিযোগ, চিহ্নিত করার জমিতেও অনেক ক্ষেত্রেই নীচে কয়লা আছে জানিয়ে ‘এনওসি’ দিচ্ছে না ইসিএল।

এই প্রকল্প নিয়ে টানাপড়েন জেলার দীর্ঘদিনের চর্চার বিষয়। ১৯৯৮-এ সিটু নেতা হারাধন রায় সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বাসনের জন্য মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৫-এ আদালত কয়লা মন্ত্রককে পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশ দেয়। তার পরে ১২৬টি জায়গাকে পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত করা হয়। কয়লা মন্ত্রক এর জন্য ২,৬৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। তার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে এডিডিএ। রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তের ক্ষোভ, “বিরোধী দল হিসেবে আমাদের প্রশাসনিক বৈঠকে ডাকা হলে আমরাও সমাধান সূত্র খুঁজে দিতে সাহায্য করতে পারি। তার কোনও সুযোগ রাজ্য প্রশাসন দেয় না। ফলে, ধসের জেরে বিপদ ঘটলে রাজ্য সরকারও তার দায় এড়াতে পারে না।’’

এ দিকে, যে ভাবে আবাসন বা ‘ফ্ল্যাট’ তৈরি করছে এডিডিএ, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেন্দা গ্রামরক্ষা কমিটির সভাপতি বিজু বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিশপুরের তৃণমূল নেতা তপনকুমার পালেরা জানান, ফ্ল্যাটে যাবেন না। ইসিএল যে ভাবে পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুরবাজারি, জামুড়িয়ার গোবিন্দপুরে বিরাট এলাকা ঘিরে আলাদা ভাবে একতলার আবাসন, মন্দির, বাগান তৈরি করছে, সে ভাবে প্রকল্প তৈরি করতে হবে।

সামগ্রিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধসপ্রবণ এলাকা ছেড়ে না গেলে জনপদ বিপন্ন হবে। জায়গা খোঁজার চেষ্টা চলছে। তা পেলেই সব দাবি পূরণের চেষ্টা করা হবে।।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Rehabilitation Project Ranigunj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE