Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

অসহযোগে সাড়া দিয়ে রবিবার স্কুল

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ তনভীর নসরিন জানাচ্ছেন, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে সে সময় অনেক স্কুলই রবিবারের বদলে সোমবার বন্ধ রাখা শুরু করেছিল।

রেওয়াজ: রবিবার জামালপুরের স্কুলে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

রেওয়াজ: রবিবার জামালপুরের স্কুলে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:১৭
Share: Save:

রবিবার স্কুল হয়। ছুটি থাকে সোমবার।

গত ৮৫ বছর ধরে এটাই রেওয়াজ জামালপুরের গোপালপুর গ্রামের মুক্তকেশী উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ইংরেজদের নিয়মের বিরোধিতা করে রবিবারের ছুটির বদলে সোমবার ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন স্কুল পরিচালন সমিতি। সেই ঐতিহ্য চলছে আজও।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার ঘোষ বলেন, “তখন দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। বিদেশি দ্রব্য থেকে ইংরেজদের সিদ্ধান্ত, কিছুই মানবেন না বলে পণ করেছেন দেশবাসী। সেই সময় ১৯২২ সালের ৫ জানুয়ারি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম পরিচালন সমিতির সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়, ইংরেজদের নিয়ম মেনে রবিবার নয়, ছুটি থাকবে সোমবার।’’

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ তনভীর নসরিন জানাচ্ছেন, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে সে সময় অনেক স্কুলই রবিবারের বদলে সোমবার বন্ধ রাখা শুরু করেছিল। কিন্তু, বেশির ভাগই সেই ধারা বজায় রাখতে পারেনি। সেখানে এখনও নিজস্বতা বজায় রেখেছে জামালপুরের স্কুল। তনভীর নাসরিনের কথায়, ‘‘স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাস আমরা ভুলতে বসেছি। সেখানে অসহযোগ আন্দোলনের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রেখেছে ওই স্কুল। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।”

স্কুল সূত্রে জানা যায়, হাতে গোনা কয়েক জন পড়ুয়াকে নিয়ে গোপালপুর গ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামী অবিনাশচন্দ্র হালদার নিজের জমিতে আটচালায় স্কুল খোলেন। নাম হয় গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়। পাশে দাঁড়ান গ্রামেরই রাজবল্লভ কুমার, বিজয়কৃষ্ণ কুমার, ভূষণচন্দ্র হালদারেরা। বর্তমান স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নাসিরুল হক বলেন, “পরিচালন সমিতির সদস্যরা পড়ুয়াদের জন্য নিজেরা রান্না করতেন। শিক্ষাবিদ ভূপেন্দ্রনাথ নায়েক পড়ানোর ফাঁকে পড়ুয়াদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাঠ দিতেন।” স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমীরকুমার ঘোষাল বলেন, “এই স্কুলে এক সময় চরকা কাটা হতো। ইংরেজি পড়ানোও নিষিদ্ধ ছিল।”

এখন স্কুলটি কলেবরে বেড়েছে। বাহ্যিক পরিবর্তনও হয়েছে। কিন্তু, ৮৫ বছরের ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি। পড়ুয়া সৌমী ঘোষ, গৌরব সরকাররা তাই বলছে, “এমন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয় ক’জন! স্কুল আমাদের গর্ব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE