Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

স্কুলে ফিরতে চেয়ে আর্জি মেয়েদের

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল ওই কিশোরীরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৮
Share: Save:

কেউ বাড়ির কাজ করতে গিয়ে বই ভুলেছিল। কেউ পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে স্কুলব্যাগ গুঁজে রেখেছিল ঘরের কোণে। কয়েক বছর পেরিয়ে এসে ফেলে আসা স্কুলেই ফিরতে চাইছে ওই কিশোরীরা।

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লকের দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের দ্বারিয়াপুর ডোকরাপাড়া এবং ষষ্ঠীতলার জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত ওই ১৩ জন কিশোরীর দাবি, এলাকার অন্য মেয়েদের দেখে পড়াশোনার প্রয়োজন বুঝতে পেরেছে তারা। সঙ্গে সাইকেল, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতো সরকারি সুবিধা পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সরকারি স্তরেও প্রচার করা হয়েছে সম্প্রতি। এর পরেই ফের পড়াশোনা করতে চেয়ে ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ১১ থেকে ১৯ বছরের ওই মেয়েরা।

বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, “১৩ জন স্কুলে ভর্তি হতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের যাতে ফের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল ওই কিশোরীরা। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, মূলত সচেতনতার অভাব ও আর্থিক টানাপড়েনের কারণেই মাঝপথে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় মেয়েদের। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়েও হয়ে যায় অনেকের। স্কুলছুট ওই কিশোরীরাও জানায়, বাড়ির কাজ, ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই স্কুলে যাওয়া হত না। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পড়তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারা।

বছর দু’য়েক আগে নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন পড়া ছেড়ে দেওয়া এক কিশোরীর বাবা বলেন, ‘‘আমার এক ছেলে, তিন মেয়ে। এক সঙ্গে সবাইকে পড়ানো সম্ভব ছিল না। তাই মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।’’ এখন ওই কিশোরী দিনমজুরি করে দৈনিক ১৪০ টাকা রোজগার করে বলেও জানান তিনি। বছর চোদ্দোর আর এক কিশোরীর মায়ের দাবি, “বাড়ির কাজের অসুবিধার জন্যই মেয়ের পড়াশোনা ছাড়াতে হয়েছিল। আমরা কাজে গেলে ও ছোট ছেলেমেয়েদের আগলে রাখত।’’

তবে এত দিন স্কুল থেকে কেউ এসে পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার কথা, লেখাপড়ার প্রয়োজন তাদের বোঝায়নি বলেও দাবি করেছে ওই কিশোরীরা। এলাকার লোকজনের একাংশেরও অভিযোগ, স্কুলে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের পৃথক ভাবে ক্লাস নেওয়ার নিয়ম থাকলেও, তা সব সময়ে নেওয়া হয় না। এমনকি, স্কুলছুট পড়ুয়াদের বুঝিয়ে স্কুলে ফেরাতেও উদ্যোগ সে ভাবে চোখে পড়ে না।

ব্লকের শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক রিয়া সরকারের অবশ্য দাবি, “সম্প্রতি স্কুলছুট ও কন্যাশ্রী কিশোরীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তুলতে ‘এসএজি-কেপি’ (স্কিম ফর অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস–কন্যাশ্রী প্রকল্প কনভারজেন্স প্রোগ্রাম) নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। তাতে এলাকায় গিয়ে কাজের ফাঁকে স্কুলছুটদের সঙ্গে কথা বলছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সুপারভাইজ়ারেরা। তাঁদের কাছেই ওই কিশোরীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছে।’’

আউশগ্রাম ১ চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক অমিত মুখোপাধ্যায় জানান, শিক্ষার অধিকার আইনে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত পড়ুয়াদের ফের ভর্তি করানো হবে। বাকিদের ব্যাপারে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিকও।

অন্য বিষয়গুলি:

Education Ausgram Girls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy