চাল পরীক্ষায় খাদ্যমন্ত্রী। । নিজস্ব চিত্র
রেশন ডিলারের দোকানে আচমকা হাজির হয়ে খারাপ চাল-গমের নমুনা দেখলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বুধবার বিকেলে মন্ত্রী এমন অনিয়ম দেখার পরেই তাঁর নির্দেশে রাত পর্যন্ত তদন্ত করেন খাদ্য দফতর ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদ্য নিয়ামক দেবমাল্য বসুর নেতৃত্বে আর একটি দল অভিযান চালিয়ে পাঁচটি গুদামঘর সিল করেছে। এ দিনই আবার বর্ধমানে খাদ্য দফতরের গুদাম থেকে নিম্নমানের চাল দেওয়ার অভিযোগে সরব হন রেশন ডিস্ট্রিবিউটরেরা।
বুধবার বিকেলে মেমারি ২ ব্লকের সাতগেছিয়ার একটি রেশন ডিলারের দোকানে যান খাদ্যমন্ত্রী। রেশনের চাল হাতে নিয়ে দেখেন, সরকারের দেওয়া চালের সঙ্গে অন্য চাল মেশানো হয়েছে। এই চাল কোথা থেকে পেয়েছেন ডিলার, তা জানার পরেই লাগোয়া বেগুনিয়া গ্রামে একটি গুদামে যান মন্ত্রী। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, গুদামটি গ্রামের এক ব্যক্তির হলেও সেখানে চাল-গম রাখেন বর্ধমানের এক বাসিন্দা। তাঁকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন এ রকম অনিয়ম হচ্ছে, তা খুঁজে বের করার জন্য দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। ওই রেশন ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজ্যের ৮০০ ডিস্ট্রিবিউটরকে কলকাতার ইউনিভার্সিটি হলে বৈঠক করে কড়া বার্তা দিতে চলেছি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুধবার ওই গুদামে ঢুকে মন্ত্রী-সহ ও প্রশাসনের কর্তারা দেখেন, বছর পাঁচেকের পুরনো প্রায় ৫০০ বস্তা জলন্ধরের গম মজুত রয়েছে। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘আমি গুদামের সামনে গিয়ে দেখি, দু’তিনটি লরি দাঁড় করানো রয়েছে। সম্ভবত ওই গম বের করা হচ্ছিল। ভিডিও ফুটেজ রেখে আমরা ওই গুদামে হানা দিয়েছি ও তদন্ত করেছি।’’ খাদ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পাঁচ বছর আগের গম কী ভাবে বেগুনিয়ায় এল, সেটাই রহস্যের বিষয়। তা ভেদ করতে গিয়ে ভিজিল্যান্স দলেরও মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়!’’
বৃহস্পতিবার বর্ধমানে মাটি মেলা প্রাঙ্গণের কাছে খাদ্য দফতরের একটি গুদামে চাল আনতে যান চার ডিস্ট্রিবিউটর। কিন্তু সেখানে নিম্নমানের চাল রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। বিশ্বনাথ দত্ত, আজিমুদ্দিন শেখরা অভিযোগ করেন, গুদামের বস্তায় যে ছাল রয়েছে তা পুরনো ও মোটা। তাঁদের দাবি, এই চাল নিলে কোনও সময়ে পরিদর্শন হলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। গুদামের আধিকারিক প্রসেনজিৎ মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, এই চাল কী ভাবে গুদামে এল, তা তাঁদের জানা নেই। ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশের দাবি, রাজ্য জুড়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী রেশন নিয়ে চক্র চালাচ্ছে। তা ভাঙতে না পারলে সরবরাহ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।
রাজ্যের এমআর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘প্রমাণ হল, সরকারি গুদাম থেকেই নিম্নমানের চাল ডিস্ট্রিবিউটরদের দেওয়া হয়। ডিস্ট্রিবিউটরেরা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত নন।’’ যদিও জেলা খাদ্য নিয়ামক দেবমাল্য বসু বলেন, ‘‘মন্ত্রী হাতেনাতে অনিয়ম ধরেছেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় ডিস্ট্রিবিউটরেরা সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করছিলেন। প্রতি তিন-চার মাস অন্তর পুরনো চাল পাল্টানো হয়। এ দিন সেই কাজই চলছিল। শুক্রবার সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy