বাঁ দিকে, রাস্তার পাশে কোনও পাকা ছাউনি ছাড়াই চলছে দোকান। ডান দিকে, পড়ে রয়েছে মানকর গ্রামীণ হাসপাতাল। ছবি: বিকাশ মশান।
ঐতিহ্য, ইতিহাস পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে এ শহরের। নাগরিক পরিষেবাগুলিও থমকে গিয়েছে সেই আদ্যিকালে।
হাসপাতাল থেকে পানীয় জল না মেলা, উড়ালপুল থেকে রেলগেটের বন্ধ হয়ে থাকা— এ সব নিত্য ঝুটঝামেলা নিয়েই বাঁচছেন এ শহরের বাসিন্দারা। প্রবীণ বাসিন্দাদের কথায়, এক সময়ের সমৃদ্ধ শহর এখন যেন নেই রাজ্যের দেশ।
প্রায় ২০ হাজার লোকের বাস মানকর গ্রামে। তাঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে রয়েছে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল। তবে শুধু মানকরই নয়, আশপাশের বুদুবুদ, গলসি ১, আউশগ্রাম ১ ও ২ নম্বর ব্লকের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা এই হাসপাতালটির উপরেই নির্ভর করেন বলে জানান স্থানীয় মানুষেরা। তাঁদের কথায়, এক সময় হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু এখন একটুতেই অধিকাংশ রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালে ৭টি পূর্ণ সময়ের চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে প্রায় সবক’টিই ফাঁকা। আধুনিক অস্ত্রোপচারের বন্দোবস্তো থাকলেও অস্ত্রোপচার হয় না বলেই বাসিন্দাদের দাবি। অভিযোগ রয়েছে নিয়মিত অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা না মেলারও। বুদবুদের মহম্মদ আকবর, মানকরের সুরজিৎ গুপ্তরা বলেন, ‘‘আগে এই হাসপাতালে প্রায় সব চিকিৎসাই হতো। এখন ওখানে যাওয়া মানে সময় নষ্ট করা।’’
মানকরের উপর দিয়ে গিয়েছে কলকাতা-দিল্লি রেল লাইন। রাজধানি এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে অজস্র ট্রেন এই লাইনে যাতায়াত করে। পুরুলিয়া ও আসানসোল থেকে বর্ধমানগামী লোকালও চলে নিয়মিত ব্যবধানে। কিন্তু দিনের অধিকাংশ সময় রেলগেট বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পড়তে হয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। অথচ মানকর দিয়েই আসানসোল, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া থেকে কাটোয়া, কালনা, নবদ্বীপ-সহ বিভিন্ন রুটের বাস যাতায়াত করে। বাসিন্দাদের দাবি, উড়ালপুল নির্মাণের জন্য বারবার দরবার করা হলেও ফল মেলেনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মহকুমা শহর বুদবুদে গড়ে উঠেছিল সেনাছাউনি। ছাউনির পাশে জিটি রোডের ধারে বুদবুদ বাজারও রয়েছে সেই সময় থেকে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে শ’চারেক দোকান রয়েছে। অথচ কোনও নির্দিষ্ট আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। নিকাশিও বেহাল। ফলে সামান্য বৃষ্টি পড়লেই দোকানে জল ঢুকে যায়। দোকানের সামনে রাস্তা নোংরা জমে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বুদবুদের মাছের আড়তটি থেকে দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় মাছ সরবরাহ করা হয়। মাছ বাজারে কয়েকটি পাকা ঘর থাকলেও সব্জি বাজারটি চলে কার্যত খোলা মাঠে। যদিও প্রশাসনের দাবি, সব্জি মাণ্ডি গড়ার কাজ প্রায় শেষ। শীঘ্রই বাজারটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে বুদবুদে একটি দমকল কেন্দ্র গড়ার দাবিও রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার কোথাও আগুন লাগলে পানাগড়ের দমকল কেন্দ্রটির উপর ভরসা করতে হয়। তাতে অনেক সময়েই দমকল আসতে আসতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় পুকুর রয়েছে। কাজেই দমকল কেন্দ্র গড়া হলে জলের সমস্যা হবে না। দরকার হলে এখান থেকে আউশগ্রাম ১ ও ২ ব্লকেও দমকলের ইঞ্জিন পাঠানো যাবে বলেও তাঁদের দাবি। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বারবার দরবার করা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে দমকল কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস মেলেনি।
পানীয় জলের সমস্যাও রয়েছে এই এলাকায়। বাসিন্দারা জানান, এক সময় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলপ্রকল্পে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়মিত পানীয় জল সরবরাহ করা হতো মানকর ও বুদবুদে। কিন্তু শেষ আট-ন’বছর যাবৎ তা বন্ধ। আচমকা জল সরবরাহ বন্ধ হল কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮০ সালে এক লক্ষ গ্যালন ক্ষমতার জলাধার গড়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকায় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পরে প্রকল্পটি চালানোর দায়িত্ব পায় পঞ্চায়েত সমিতি। প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় প্রচুর বিদ্যুৎ বিল বাকি ছিল। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও নিয়মিত বেতন পেতেন না। জেলা পরিষদ থেকে বেশ কয়েকবার অর্থ পাঠিয়ে সমস্যার সাময়িক সুরাহা করা হলেও এক সময় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা। তারপর ২০০৬ সাল থেকে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয় পঞ্চায়েত সমিতি। তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আশ্বাস, শীঘ্রই প্রকল্পটি চালু হবে।
সেই আশাতেই বাঁচছেন বুদবুদ- মানকরের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy