পঙ্গপাল। নিজস্ব চিত্র
‘পঙ্গপাল তাড়াতে না পারলে এ বার কাজে ভঙ্গ দিতে হবে’— সহজপাঠে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই পঙ্গপাল এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলছে কৃষি-কর্তাদের কপালে। অধিকাংশ কৃষি-কর্তা ও কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ রাজ্যে পঙ্গপালের হামলা হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না চাষিরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পঙ্গপালের ঝাঁক রাজস্থানে ফসলেরও ক্ষতি করেছে। এর পরে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে দেখা গিয়েছে তাদের। বুধবার উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে দেখা গিয়েছে পঙ্গপালের একটি বড় দলকে। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, এক-একটি দলে থাকে কয়েক লক্ষ পঙ্গপাল। কয়েক কিলোমিটার লম্বা হয় এক-একটি দল। এক দল পঙ্গপাল দিনে আড়াই হাজার মানুষের খাবার নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। রাতে ঝোপে-ঝাড়ে এবং ফসলের গাছে বিশ্রাম নেয় সেগুলি। তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলেই ঝাঁক বেঁধে উড়তে শুরু করে। ফসল-সহ সবুজ খেত পেলে নিমেষে শেষ করে দেয় পঙ্গপালের দল।
রাজস্থান, গুজরাতের মত রাজ্যগুলিতে প্রায় প্রতি বছরই আসে এই রকম দল। তবে পশ্চিমবঙ্গে ও ত্রিপুরায় শেষ পঙ্গপাল দেখা গিয়েছিল ১৯৬০-৬১ সালে, দাবি কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধমান শাখার কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ লক্ষ্মণচন্দ্র পটেল জানান, পঙ্গপাল অনুকূল পরিবেশ পেলে ভাল বংশবিস্তার করতে পারে। এমন কোনও ফসল নেই যা সেগুলি খায় না। রাজস্থান, গুজরাতে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখার জন্য সরকারি সংস্থা রয়েছে।
ঝড়-বৃষ্টির পরে, এখন পূর্ব বর্ধমানের চাষিদের অনেকে চিন্তিত এই পঙ্গপাল নিয়ে। কাটোয়ার গঙ্গাটিকুরির গৌড় লাহা, প্রভাকর লাহা, মেজিয়ারির শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘পঙ্গপালের আতঙ্কে জমির আনাজ নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’ যদি পঙ্গপাল হানা দেয়, চাষিদের কী কর্তব্য? কাটোয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক তপন মণ্ডল জানান, পঙ্গপালের হাত থেকে বাঁচতে ধান থেকে শুরু করে যে কোনও আনাজে ‘অর্গান ফসফেট’ স্প্রে করতে হবে। সতর্কতার পন্থা জানিয়ে চাষিদের জন্য লিফলেট বিলি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিধানচন্দ্র কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের গবেষক সৈকত সাহা বলেন, ‘‘পঙ্গপালের দল যখন কোনও জমিতে বসবে তখন ৫-১০ শতাংশ হারে বেঞ্জিন হেক্সাক্লোরাইড অর্গান ফসফেট গ্রুপের কোনও ওষধ স্প্রে করে মারা যেতে পারে।’’
পঙ্গপালের দলকে আকর্ষিত করার মতো পরিবেশ এখন এ রাজ্যে নেই বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের তো মাঠে তেমন ফসল নেই। পঙ্গপাল কী ভাবে এখানে আকৃষ্ট হবে? তা ছাড়া, পঙ্গপাল শুকনো বালিবিশিষ্ট এলাকায় ডিম পাড়তে ভালবাসে। সে পরিবেশও রাজ্যে নেই। তাই পঙ্গপাল নিয়ে সরকার আতঙ্কিত নয়। তবে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy