ডাকের সাজ তৈরি চলছে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
এক সময়ে ডাকের সাজেই সাজতেন দেবী প্রতিমা। কিন্তু সময় বদলেছে। প্রতিমার সাজে ডাকের জায়গায় কদর বেড়েছে অন্য জিনিসপত্রের। এর জেরে সঙ্কটে পড়েছেন ডাকের সাজের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা। পশ্চিম বর্ধমান জেলাও তার ব্যতিক্রম নয়।
রানিগঞ্জ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বক্তারনগর। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ডাকের সাজ তৈরির কাজে ব্যস্ত বাবলু মালাকার, সুরজিৎ মালাকার, দেবাশিস মালাকার, সমর মালাকাররা। তাঁদের দাবি, প্রায় দু’শো বছর ধরে তাঁদের পরিবার ডাকের সাজের কাজ করে আসছে। কিন্তু এখন অবস্থা পড়তির দিকে। কোনও রকমে এই শিল্পকে আঁকড়ে রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সরকারি সাহায্য ছাড়া আর এই শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন।
কাঁচামালের খরচ কমাতে গত ১৫ বছর ধরে স্থানীয় কারিগরেরা কলকাতার চিনাবাজার থেকে মাল কিনছেন। এতে কিছুটা হলেও অবস্থা সামাল দেওয়া গিয়েছে। আগে মোম ও বিশেষ ধরনের আঠা তৈরি করতে হতো। যার আয়ু ছিল, মাত্র আট ঘণ্টা। বর্তমানে অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি আঠা সেই সমস্যা মিটিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্ডালের হরিপুরের ডাকসাজ শিল্পী পরেশ মালাকার ও কৈলাস মালাকাররাও জানান, খরচে কিছুটা লাগাম পড়ায় জেলার নানা প্রান্তের সর্বজনীন পুজোগুলিতে ডাকের সাজ সরবরাহ করতে পারছেন।
শিল্পীরা জানান, দুর্গাপুজোয় কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। বাড়ির মহিলারাও তখন কাজে হাত লাগান। তবে কলকাতায় যন্ত্রের মাধ্যমে অনেক কম সময়ে ও খরচে কাজ হওয়ায় বাজারে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে উঠছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেকে তাই প্রতিমা তৈরির দিকেও ঝুঁকছেন। বারাবনির তপন মালাকার তেমনই এক জন।
ডাকের সাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদেরও হাল একই। উখড়া বাজারে দোকান চালান বলাই চুনারি, জয়দেব চুনারিরা। তাঁরা জানান, কৃষ্ণনগর ও কলকাতা থেকে ডাকের সাজ এনে সামান্য লাভে কাজ করতে হচ্ছে।
ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার সামর্থ্যও নেই। বাবলুবাবু, বলাইবাবুদের আক্ষেপ, ‘‘বহু বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি। তাই নতুন প্রজন্মের কেউ আর এই কাজে আসতে চাইছেন না” এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চোধুরী জানান, “আমার কাছে আবেদন এলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy