মৃত মফিজা খাতুনের শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছেন বর্ধমানের লাকুর্ডির কাটরাপোতার মেয়ে মেহেরুন্নেসা শেখ। শিয়ালদহ থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তাঁকে ট্রেনে তুলতেই বর্ধমান স্টেশনে গিয়েছিলেন মেহেরুন্নেসার মাসি মাফিজা খাতুন (৩৫), মেসোমশাই আব্দুল মফিজ শেখ ও তাঁদের ছ’বছরের কন্যা। বুধবার দুপুরে জলের ট্যাঙ্ক ফেটে দুর্ঘটনা যে তিন জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাফিজা। জখম হয়ে হাসপাতালের আইসিইউয়ে ভর্তি রয়েছেন আব্দুল মফিজ শেখ আর তাঁর ছ’বছরের কন্যা। সদ্য মা-হারা বোনের কাছে রয়েছেন মেহেরুন্নেসা। এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের দুই যাত্রীও। বৃহস্পতিবার রেলের গাফিলতিতে দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী-সহ তিন জন মারা গিয়েছে বলে রেল পুলিশের বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আব্দুল মফিজ।
রেল পুলিশ সুপার (হাওড়া) পঙ্কজ কুমার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। ফরেন্সিক পর্যায়ে তদন্ত করা হবে। কেন ও কী কারণে ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ল তা বিস্তারিত তদন্ত করা হবে।”
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আব্দুল মফিজ এই ঘটনায় যাঁরা যুক্ত তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আইপিসি ৩৩৭, ৩৩৮, ৩০৪এ এবং ২৮৩ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। রেলওয়ে আইনের ১৫৩ ও ১৫৪ নম্বর ধারাতেও মামলা হয়েছে। মেহেরুন্নেসার কথায়, “আমরা ওই দিন দুপুরে শিয়ালদহ লোকাল ধরতে বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়িয়েছিলাম। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। আমিও জখম হয়েছি। কিন্তু বোনকে দেখাত মনে জোর করে আইসিইউতে রয়েছি।” তাঁর মা মুমতাজ বেগম দিল্লিতেই থাকেন। নভেম্বরের শেষে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন মেহেরুন্নেসা। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে মাফিজার পারলৌকিক কাজ হয়। মৃতের ভাই শেখ রাজু বলেন, “রেলের গাফিলতিতেই দিদি মারা গেল। ভাগ্নির অবস্থাও আশঙ্কাজনক। জামাইবাবুও হাসপাতালে ভর্তি।” মফিজ স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। মৃতার বাবা ইয়াদ আলি ও মা সামসুরন্নেসা বিবি দুর্ঘটনার আঘাতে বিপর্যস্ত। মেডিক্যাল কলেজর অধ্যক্ষ তথা শিশু বিশেষজ্ঞ কৌস্তুভ নায়েক বলেন, ‘‘ভর্তি থাকা মা-হারা শিশুটির অবস্থা সঙ্কটজনক নয়। তবে পায়ের অস্ত্রোপচার দরকার।’’
এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের ক্রান্তি বাহাদুর (১৬) ও ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের সোনারাম টুডু (৩৫)। বৃহস্পতিবার ময়না-তদন্তের পরে ক্রান্তির দেহ সাহবেগঞ্জে নিয়ে যান পরিজনেরা। তাঁরা জানান, নবম শ্রেণির ছাত্র ক্রান্তি কয়েক দিন আগে হুগলির পাণ্ডুয়ায় দাদুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। রবিবার সকালে পাণ্ডুয়া থেকে ট্রেনে বর্ধমান স্টেশনে নামে সে। সেখান থেকে দূরপাল্লার ট্রেনে সাহেবগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল। ক্রান্তির এক আত্মীয়ের দাবি, “যাত্রী ছাউনিতে না বসে স্টেশনেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল ছেলেটা। পৌনে ১২টা নাগাদ এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে এনে যাত্রী ছাউনিতে এসে দাঁড়ায়। বিস্কুট শেষ করার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy