প্রতীকী ছবি।
সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সভা চলছে দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে। সম্মেলনের বিরতিতে বাইরে বেরিয়ে প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘পদ আঁকড়ে বসে থাকার দিন কিন্তু শেষ!’ দলীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রই সভায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সে কথা। ইতিমধ্যেই জেলা কমিটি, এরিয়া কমিটি, শাখা কমিটির অনেকেই জায়গা হারানোর আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন।
সিপিএম সূত্রে খবর, সংগঠনের সব স্তরেই বেশ কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আছে। আবার পদে থাকা কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, দলের কথা পৌঁছে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। কোথাও আবার সংগঠনের একাংশ মাঠে নেমে কাজ করলেও বাকিরা হয়তো দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখে দিচ্ছেন। জেলার বেশ কয়েক জন শাখা সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা দলের নিময় মেনে নির্দিষ্ট সময়ে সভা ডাকেন না। দলের কর্মসূচি জানতে পারেন না দলীয় সদস্যরা। ফলে, সাধারণ সমর্থকদের কাছেও কর্মসূচির খবর পৌঁছয় না। তেমন কয়েক জন শাখা সম্পাদককে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত।
লোকাল ও জোনাল কমিটি মিশিয়ে এরিয়া কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল সাংগঠনিক কাজে গতি আনা। কিন্তু এই জেলায় কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এরিয়া কমিটির সদস্যদের অনেকেই এখনও নীচের স্তরে নেমে সাধারণের সঙ্গে মিশছেন না। ফলে, সাংগঠনিক ভাবে মানুষের কাছে ঠিক ভাবে পৌঁছতে পারছে না দল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শাখা সম্পাদকের কথায়, ‘‘সভায় রাজ্য সম্পাদক কড়া বার্তা দিয়েছেন। কাজ করতে না পারলে সরে যেতে হবেই।’’ তাঁর বক্তব্য, কোনও নির্দিষ্ট এলাকা নয়, জেলা জুড়েই কার্যত ছবিটা এক। প্রায় সব জায়গাতেই কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে সমর্থকদের কাছ থেকে এই ধরনের অভিযোগ পেয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। রাজ্যে জোড়া প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে এখন কঠিন লড়াইয়ের সময়ে সংগঠনে নিষ্ক্রিয়তার সমস্যাকে কড়া হাতেই মোকাবিলা করতে চাইছে সিপিএম। বছর শেষে দলীয় সদস্যপদ নবীকরণের সময়ে সংগঠনের নানা স্তরেই নিষ্ক্রিয়দের ছেঁটে ফেলতে চাইছে দল। তার জন্য কমিটির পদে থাকা নেতা-কর্মীদের উপরে কোপ পড়লেও সূর্যবাবুরা এখন পিছপা হতে রাজি নন। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় যে হেতু অভিযোগের হার বেশি, তাই রাজ্য সম্পাদকও আরও কঠোর ভাবে সতর্ক-বার্তা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে বলেই সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। সূর্যবাবুও বলেছেন, ‘‘সিঙ্গুরের লং মার্চ একটা উদাহরণ। আরও অনেক কিছু বলা যায়। বিজেপি ও তৃণমূল ক্রমাগত মানুষের জীবন ও জীবিকার উপরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র আমরাই মানুষের জন্য লড়াই করছি। সবাই তা দেখছেন।’’ এমন পরিস্থিতিতে আরও তৎপর হওয়ার বদলে দলের কিছু নেতা-কর্মীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকা দুশ্চিন্তায় রেখেছে দলীয় নেতৃত্বকে। দুর্গাপুরের সভায় রাজ্য সম্পাদক সেই জন্যই কাজ না করলে পদ আঁকড়ে পড়ে না থেকে অন্যদের কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। বয়সজনিত কারণেও কর্মীদের একাংশ ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছেন না। তাঁদেরও সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ
দিয়েছেন সূর্যবাবু।
তবে দলের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বাইরে কিছু বলব না। যদিও কমিটিতে কে আছেন বা নেই, তা দিয়ে কিছু হয় না। কর্মী হিসেবে দলের নীতি মেনে আমরা কাজ করে যাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy