গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেনের জামিনের মামলা ছিল আদালতে। —ফাইল চিত্র।
আবার বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেনের জামিন খারিজ হয়েছে আদালতে। অন্য দিকে, শুনানিতে অনুব্রতের আইনজীবী তাঁর হয়ে আর জামিনের আবেদনই করেননি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নামে এবং বেনামে প্রচুর টাকা লেনদেন হত অনুব্রতের। এবং তার সিংহভাগই গরু পাচারের টাকা। পাশাপাশি, অনুব্রতের দেহরক্ষী সহগল তৃণমূল নেতার ‘কথায় শুধু নাচতেন’ বলে আদালতে সওয়াল করলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
শুক্রবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির গ্রেফতারির মামলার শুনানি ছিল। গরু পাচারকাণ্ডে সিবিআই তাঁকে ২০২১ সালের অগস্ট মাসে গ্রেফতার করে। তার আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন সহগল। তিহাড় জেল থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন অনুব্রতের দেহরক্ষী। বিচারকের কাছে নিজের জামিনের আবেদন করে সহগল বলেন, ‘‘হুজুর প্রায় ৮ মাস হয়ে গেল স্ত্রী এবং আমার বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমায় জামিন দেওয়া হোক।’’ সহগলের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু সওয়াল করেন, যে কোনও শর্তে তাঁর মক্কেলকে জামিন দেওয়া হোক। তবে জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে সিবিআই জানায় বেনামি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পর বেনামি জমির ডিড পেয়েছে তারা। এমন অনেক জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির মালিকানা এবং হস্তান্তরের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার উদাহরণ দিয়ে জানান, বীরভূম জেলার কঙ্কালীতলায় প্রায় এক একর জমির হদিস পাওয়া গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ওই জমি বেনামে কিনতে বাধ্য করিয়েছেন সহগল। এখানেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে সিবিআই। তাদের দাবি, ‘‘যাঁর নামে জমি কেনা হয়েছে, তিনি জমি রেজিস্ট্রি অফিসেও যাননি। এমনকি, জানেনও না যে, তাঁর নামে এক একর জমি রয়েছে।’’
সহগলের কাছ থেকে এই তথ্য উদ্ধার হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ তথ্য এখনও জোগাড় করতে পারেনি সিবিআই। তাই এর জন্যেও আদালতের কাছে আরও কিছু দিন সময় চায় তারা। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘সহগল খুব প্রভাবশালী। তিনি জেলে আছেন বলেই সিবিআই বিভিন্ন তথ্য বের করতে পারছে। যদি তাঁর জামিন হয়ে যায় তা হলে তদন্তে সমস্যা হবে। আর তাঁর যা সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে, তা বেতন পরিকাঠামোর সঙ্গে খাপ খায় না।’’ সহগলের আইনজীবী সওয়াল করেন, ‘‘সহগল কেবল মাত্র অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী ছিলেন। এক জন দেহরক্ষীকে প্রায় ৮ মাস হাজতে রাখার কি কোনও যুক্তি আছে?’’ দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সহগল শুধু দেহরক্ষী ছিলেন তা নয়, তিনি বিভিন্ন সময় অনুব্রতের হয়ে কাজ করতেন। টাকা তোলা থেকে বেনামি ব্যাঙ্কের খাতা তৈরি, জমি কেনা, দখল করা-সহ প্রায় সব কাজ করতেন।’’
তার পর তাঁর জামিন খারিজ করে সহগলের আবার জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক রাজেশ। পাশাপাশি নির্দেশ দেন, সহগলকে তিহাড় জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই।
অন্য দিকে অনুব্রতের বিষয়ে সে ভাবে কোনও শুনানি হয়নি শুক্রবার। তাঁর জামিনের আবেদন করেননি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ। ‘ভোলে বোম’ রাইস মিলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার যে আবেদন করেছিলেন, সেটা তুলে নেন তিনি। জানান, পরে নতুন করে আবেদন করা হবে।
সিবিআই দাবি করেছে অনুব্রতের বিরুদ্ধে বহু তথ্য পেয়েছে তারা। প্রায় শতাধিক ভুয়ো বা বেনামি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আগেই পাওয়া গিয়েছে। ১১৫টি ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ, এমনকি পরিচারক, চালকলের তথাকথিত কর্মচারীদের নামে টাকা লেনদেন করা হয়েছে। যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগ গরিব মানুষ। তাঁরা জানেনও না যে কী হচ্ছে তাঁদের মাধ্যমে! পরে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা শুধু ‘ভোলে বোম’ রাইস মিল নয়, তৃণমূল নেতার অন্যান্য ঘনিষ্ঠের কাছেও পৌঁছেছে। করোনার সময়ে এই কাজগুলি হয়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy