Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে শিশু, পুড়ে মৃত দম্পতি

এ দিন বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন মৃতার মামা, বর্ধমান শহর লাগোয়া নাড়ি-বেলবাগানের বাসিন্দা দিলীপ রাজমল্ল।

বর্ধমানের বিধানপল্লিতে এই ঘরেই ঘটনাটি ঘটে। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমানের বিধানপল্লিতে এই ঘরেই ঘটনাটি ঘটে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৬
Share: Save:

ঘরের এক কোণে ভয়ে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আড়াই বছরের ছেলে। একটি দূরেই দাউদাউ করে জ্বলছেন তার বাবা-মা। মাঝরাতে দরজা ভেঙে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করেন আত্মীয়েরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও সোমবার সকালেই মারা যান বিশ্বজিৎ কংসবণিক (৪০) ও তাঁর স্ত্রী বিভাদেবী (২৬)। বিভাদেবীর পরিজনেদের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই পুড়িয়ে মেরেছে তাঁদের।

এ দিন বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন মৃতার মামা, বর্ধমান শহর লাগোয়া নাড়ি-বেলবাগানের বাসিন্দা দিলীপ রাজমল্ল। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই ভাগ্নির উপর নির্যাতন করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ঠিকমত খেতে-পরতে দিত না। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হত। মাঝেমধ্যে বাপের থেকে টাকাপয়সা আনার জন্যে চাপ দেওয়া হত বলেও তাঁর অভিযোগ। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ বর্ধমান শহরের বিধানপল্লির বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবুর পরিবার। তাঁর মা শিখাদেবী বলেন, ‘‘মাঝরাতে বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার শুনে ছুটে এসে ছোট ছেলের ঘরে ধাক্কা মারি। তারপরে বড় ছেলেকে ঘুম থেকে তুলি। ততক্ষণে আমার স্বামীও উঠে পড়েছেন। স্বামী ও বড় ছেলে মিলেই দরজা ভেঙে প্রথমে নাতিকে উদ্ধার করে। তারপরে ছেলে ও বৌমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে। বড় সর্বনাশ হয়ে গেল।’’

আড়াই বছরের শ্রীজিতের অবশ্য এ সবের বোধ নেই। শুধুই মাকে খুঁজছে সে। পোড়া ঘর, আসবাব দেখে ভয় পাওয়ায় আপাতত পাশের বাড়িতে রাখা হয়েছে তাকে। সেখানে ভাইকে ভাল রাখার দায়িত্ব নিয়েছে তার জেঠতুতো দিদি, ছ’বছরের মিষ্টু। সে বলে, “কাকা-কাকিকে দেখে আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছিল। ভাইয়ের বুকে ও পায়ে লেগেছে। ও সারারাত কেঁদেছে। এখন ঘুমাচ্ছে। আমি ওর বুকে, পায়ে আদর করে দিচ্ছি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিভাদেবীর ভাই মনোজ মাল জানান, বছর পাঁচেক আগে সামাজিক অনুষ্ঠান করে দিদির বিয়ে হয়। মাঝেমধ্যেই অশান্তি হত। দিদির উপর নির্যাতনেরও প্রতিবাদ করতে শুরু করেছিল জামাইবাবু। সম্প্রতি বিশ্বজিৎ ও তাঁর দাদা জয়ন্তর মধ্যে নিয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চরম ওঠে। সে জন্যেই আগুন লাগিয়ে তাঁদের মেরে ফেলা হয়েছে বলে মনোজবাবুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে পুড়িয়ে মারবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। ছোট ভাগ্নেটার কী হবে কে জানে!’’

জয়ন্তবাবুর স্ত্রী, বাড়ির বড় বৌ মধুমিতাদেবীর অবশ্য দাবি, ‘‘দেওর ও জায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা হচ্ছে। পাড়ার লোকজন বসে বিবাদ মেটানোরও চেষ্টা করেছেন। আমরাও জায়ের সব দাবি মানতাম। এমন করার আগে ছেলেটার মুখের দিকে এক বার তাকাল না!” তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে টানা কান্নাকাটি করছে শ্রীজিৎ। তাঁরা অবশ্য তাকে ঋজু বলে ডাকেন। মধুমিতাদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়ে মিষ্টু সকাল থেকে ঠায় বসে আছে ঋজুর পাশে। কোথায় লেগেছে, ভাইয়ের যেন কষ্ট না হয় তা দেখতে ব্যস্ত সে। কিন্তু অতটুকু ছেলের কী মা ছাড়া চলে!’’

বাড়ির কর্তা, মৃত বিশ্বজিৎবাবু বাবা জয়দেববাবুর দাবি, “নাতির গায়েও কেরোসিন তেল ঢেলেছিল। ঠিক সময়ে দরজা না ভাঙলে ওকেও বাঁচাতে পারতাম না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Burning Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE