Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
TMC

শাস্তির খাঁড়া নামবে কি, চিন্তায় অনেকেই

কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে লোকসভা ভোটে সাফল্যের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অভিষেক জানান, ফলের পরে কার কী ভূমিকা ছিল, দল তা পর্যালোচনা করবে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৬
Share: Save:

লোকসভা ভোটে যেখানে খারাপ ফল হয়েছে, সেখানে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের দলীয় প্রতিনিধিদের বিষয়ে দল ব্যবস্থা নেবে, বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই খানিক চিন্তায় পড়েছেন আসানসোল পুরসভার পুরপ্রতিনিধিদের অনেকে। তাঁদের কারও বক্তব্য, আগের তুলনায় এ বার ওয়ার্ডে ব্যবধান কমিয়েছেন। আবার কারও দাবি, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করা উচিত দলের।

কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে লোকসভা ভোটে সাফল্যের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অভিষেক জানান, ফলের পরে কার কী ভূমিকা ছিল, দল তা পর্যালোচনা করবে। পুরভোটে নিজে টিকিট পেয়ে জিতব, কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে দল এলাকায় আশানুরূপ ফল করবে না, এমন হলে দল ব্যবস্থা নেবে। আসানসোল পুরসভায় ২০২২ সালের পুরভোটে ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জেতে ৯৯টিতে। কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তৃণমূল ৭৪টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, শহরে দলের এমন ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ রাজ্য নেতৃত্ব। এর ব্যাখ্যাও চাওয়া হয় জেলা নেতৃত্বের কাছে। রিপোর্ট জমা পড়ার পরে সে নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, আসানসোল উত্তর বিধানসভা এলাকার ৩২টি ওয়ার্ড নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্ন রয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এখানে তৃণমূল ২০টি এবং বিজেপি ১২টিতে এগিয়েছিল। অথচ এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূল এগিয়ে মাত্র ১১টিতে। বিজেপি এগিয়ে ২০টিতে। কুলটি ও আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালে হেরে যায় তৃণমূল। তবে তার পরে পুরভোটে কুলটির ২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ও আসানসোল দক্ষিণের ২২টির মধ্যে সব ক’টি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিরা জেতেন। কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটে কুলটিতে মাত্র ৫টি ও আসানসোল দক্ষিণে ৪টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।

রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জিতলেও, শহরাঞ্চলে খারাপ ফল হয়। লোকসভা ভোটেও পুর এলাকায় ফল খারাপ হয়েছে। রানিগঞ্জে পুরসভার ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দু’টিতে এবং জামুড়িয়ায় পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে ‘লিড’ রয়েছে দলের।

এই পরিস্থিতিতে, অভিষেকের মন্তব্যে অনেকেই শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। তাঁদের একাংশের দাবি, রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর মধ্যে দিয়েই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আসানসোলের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি অশোক রুদ্রের বক্তব্য, ‘‘সরলীকরণ করা ঠিক নয়। এক-একটি ওয়ার্ডে ভোটারদের চরিত্র এক-এক রকম। বাস্তব অনুযায়ী পর্যালোচনা হোক, আমরাও চাই।’’ পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বনির্ভর) ইন্দ্রাণী মিশ্রেরও দাবি, ‘‘কোথায় ভুল আছে, তা শুধরে নিতে উপযুক্ত পর্যালোচনা দরকার। তবে এ বার হার হলেও গত দু’বারের তুলনায় ব্যবধান কমাতে পেরেছি।’’ পুরসভার মেয়র পারিষদ (ক্রীড়া ও সংস্কৃতি) গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হেরেছি, এটা তো ঠিক। নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা শিরোধার্য।’’ মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিব্যেন্দু ভগতের আবার মত, ‘‘এ বার তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার জোগাড়। আমার ওয়ার্ডে হার হলেও আগের বারের তুলনায় ব্যবধান অনেক কমেছে।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নেতৃত্ব ঠিক কথাই বলেছেন। দলের ভালর জন্য পর্যালোচনা হওয়া উচিত। তাতে সংগঠনের কোমর শক্ত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Asansol Abhishek Banerjee TMC Councilors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE